সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ত্রুটি, নাকি চালকের গাফিলতি? ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগা বাজারে ঘটা ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দায় কার? ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এই প্রশ্নের সঠিক জবাব কারও কাছে নেই। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত রেলের দাবি, মৃতের সংখ্যা এখন ২৮৮। সেটা আরও বাড়তে পারে। এমন রেল দুর্ঘটনা কেন ঘটল? করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নেপথ্যে কি বড়সড় কোনও গোলমাল? এমনই সব প্রশ্ন তুলে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি একটি অডিয়ো ক্লিপ পোস্ট করেছেন টুইটারে। তার পর থেকেই তোলপাড় হয়ে গিয়েছে বিষয়টি। যদিও এই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ডিজিটাল।
এদিকে বালেশ্বর জেলার পুলিশ সুপার সাগরিকা নাথের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছুঁতে পারে। তবে তার মধ্যেই সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—দুর্ঘটনার সময় চেন্নাইগামী আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সামনে সিগন্যাল ছিল মেইন লাইনের। কিন্তু পয়েন্ট লুপলাইনেই রয়ে যায়। তার জেরেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রেল সরকারিভাবে এই খবরে সিলমোহর দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে একটি অডিয়ো ক্লিপ টুইট করলেন কুণাল ঘোষ। সেখানে রয়েছে দুই রেলকর্তার কথোপকথন। আর সেখান থেকেই করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নেপথ্যে বড় গোলমাল রয়েছে বলে তথ্য উঠে আসছে। যা প্রকাশ্যে আনলেন কুণাল ঘোষ।
ঠিক কী আছে সেই অডিয়ো ক্লিপে? অন্যদিকে প্রাথমিক তদন্তে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অডিয়ো ক্লিপে এক রেলকর্তা আর এক রেলকর্তাকে জানান, চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে ভুল ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল মেইন লাইনের দিকে, আর পয়েন্টার ছিল লুপ লাইনের দিকে। এমনটা কেমন করে সম্ভব? প্রশ্ন করলেন আর এক রেলকর্তা। পাল্টা জবাব এল, স্থানীয় কর্মীরা কেউ গোলমাল করলেই এমন হতে পারে। দুই রেলকর্তার কথোপকথনে স্পষ্ট, সিগন্যাল–পয়েন্টারের গণ্ডগোলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সূত্রের খবর, বাহানাগা স্টেশনের ঢোকার মুখে আপ এবং ডাউনের পাশাপাশি দু’টি অতিরিক্ত লাইন রয়েছে। এই জোড়া লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল দু’টি মালগাড়ি। এমন জায়গায় পয়েন্টের মাধ্যমে ট্রেন ট্র্যাক বদল করে। করমণ্ডলের চালক সবুজ সিগন্যাল পেয়ে দ্রুতগতিতে ট্রেন ছোটান। কিন্তু ট্র্যাক বদলের সংযোগস্থলের পয়েন্ট থেকে যায় লুপ লাইনে। তাই দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে সজোরে ধাক্কা মারে করমণ্ডল।
ঠিক কী বলছেন কুণাল? করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর এই অডিয়ো ক্লিপ এখন ভাইরাল। সেটি পোস্ট করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ টুইটে লেখেন, ‘সিগনাল ছিল মেনলাইনের, পয়েন্ট ছিল লুপলাইনে। রেলের দুই কর্তার কথোপকথন। অডিয়ো’র সত্যতা যাচাই হয়নি। বিষয়টা তদন্তসাপেক্ষ। বড়সড় গোলমাল আছে রেল দুর্ঘটনার পেছনে।’ গোটা বিষয়টির রহস্য উদঘাটন করতে দক্ষিণ–পূর্ব রেলের কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটিও তদন্ত করবেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। নিয়ম অনুযায়ী, পয়েন্টের আগে গতিবেগ কমাতে হয়। কিন্তু দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির গতি ১০০ কিমিরও বেশি ছিল। কেন চালক তা কমাননি? তাহলে লুপ লাইনে ঢুকে পড়েও এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে অনেকে মনে করছেন।