শহরের বুকে জনপ্রিয় অনলাইন শপিং সাইট আমাজনের ভুয়ো কাস্টমার কেয়ার সেন্টার খুলে রমরমিয়ে প্রতারণা চক্র জাঁকিয়ে বসেছিল প্রতারকেরা। চলছিল বিদেশি ক্রেতাদের ঠকানোর কারবার। অভিযান চালিয়ে এই প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস করল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডা দমন শাখার আধিকারিকরা। এই তল্লাশি অভিযানে গোয়েন্দাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তদন্তে নামে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ আধিকারিকরাও।
মঙ্গলবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নিউ আলিপুরের বঙ্কিম মুখার্জি সরণির ওই ভুয়ো কাস্টমার কেয়ার সংস্থায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই পান্ডা করণ মিশ্র ও অর্জুন মিশ্র-সহ ২২ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের প্রত্যেকেরই বয়স ২২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। হাওড়া ও দক্ষিণ শহরতলীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা এই অভিযুক্তরা। অভিযুক্তরা ওই কাস্টমার কেয়ার চালানোর কোনও বৈধ নথিপত্র পেশ করতে পারেনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিউ আলিপুর থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। বুধবার ধৃতদের আলিপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
কীভাবে এই প্রতারণা চক্র চালাচ্ছিল অভিযুক্তরা?
পুলিশি জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, টার্গেট করা হত অস্ট্রেলিয়ানদের। ‘ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকলের’ মাধ্যমে উপভোক্তাদের সঙ্গে প্রথমে কথা বলতে তারা। অভিযুক্তরা নিজেদের আমাজনের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিত বলে অভিযোগ। তারপর ক্যাশব্যাক অথবা উপহারের টোপ দিয়ে বিদেশি গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে চলত প্রতারণা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারিতরা সিংহভাগই অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। অভিযুক্তরা ' টিম ভিউয়ার' ও ‘ অ্যানিডেস্কের ' মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রথমে উপভোক্তাদের কম্পিউটার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিত। গ্রাহকদের বলা হত, তাঁদের কম্পিউটারের সিকিউরিটি সফটওয়্যার ক্র্যাশ হয়ে গিয়েছে। তাই তাঁরা উপহারের টাকা পাবেন না। এই অজুহাতে বিদেশিদের নানা তথ্য হাতিয়ে নিত অভিযুক্তরা। শুধু তাই নয়, সিকিউরিটি সিস্টেম সারিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে ৭০ থেকে ২০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চার্জ করা হত। তারপর তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থেকে টাকা গায়েবও করা হত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তল্লাশি অভিযানের সময় অভিযুক্তদের একাধিক মেশিন অন ছিল। এরপরই হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের।