জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এ রাজ্যে চালু হবে না। দুপুরেই সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার প্রশাসনিকভাবেও করা হল পদক্ষেপ। ন্যাশানাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনআরপি) যাবতীয় কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।
এনআরপি তালিকায় ভারতের প্রত্যেক বাসিন্দাকে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হয়। ২০১০ সালে প্রথম সেই তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে তা আপডেট করা হয়েছিল। ২০২১ সালে জনগণনার আগে এবার ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনআরপি প্রক্রিয়া চলার কথা ছিল। তার আগেই এনপিআর সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন।
কলকাতা ও হাওড়া পুরসভার কমিশনার-সহ রাজ্যের সব জেলাশাসককে স্বরাষ্ট্র দফতরের জনগণনা সেলের অতিরিক্ত সচিব নির্দেশিকা জারি করে বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে এনআরপি তৈরি বা আপডেট সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ আপনাদের জানানো হল। রাজ্য সরকারের আগাম ছাড়পত্র ছাড়া এনআরপি সংক্রান্ত কোনও কাজ করা যাবে না।'
গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন সামাজিক-ধর্মীয় সংগঠন-সহ বামেরা অভিযোগ জানিয়ে আসছে, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ও এনআরপি'র মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। বরং এনআরসির অপর একটি নাম হল এরআরপি। তাদের দাবি, কেন্দ্রের নথিতেই বলা রয়েছে যে, ভারতীয় নাগরিকদের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরআইসি) তৈরির প্রথম ধাপ হল এনপিআর। এখানেই প্রশ্ন তোলে বামেরা। তাদের বক্তব্য, একদিকে এনআরসির বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল। অন্যদিকে এনপিআরকে সমর্থন জানিয়েছে সরকার। সেজন্য মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে সরব হয় বামেরা।
ইতিমধ্যে গত সোমবার জনগণনার কারণে বাড়ির তালিকা-সহ এনপিআর আপডেটের জন্য প্রশাসনিক কর্তাদের দ্রুত গণনাকারী নিয়োগের আর্জি জানান হাওড়ার জেলাশাসক। সেই ঘটনার ছ'দিন পরই এনআরপি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল নবান্ন।
বিষয়টিকে নিজেদের জয় হিসেবে তুলে ধরছে বামেরা। সিপিআইএময়ের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, 'বাম দল, মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের জয়। ক্রমাগত চাপ তৈরির ফলে রাজ্য সরকার এনআরপি বাতিল করেছে।'
যদিও মমতাকে তোপ দেগেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন যে দেশের স্বার্থ বিপন্ন করা ছাড়া তাঁর সামনে কোনও পথ খোলা নেই।'
অন্যদিকে, এপিডিআর নেতা রঞ্জিত শূর বলেন, 'এটা প্রমাণিত মমতা চান না এনআরসি নিয়ে তাঁর দিকে প্রশ্ন উঠুক, বিশেষত যে সময় মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।'