মাসখানেক আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই ঘটনার রিপোর্ট জমা দিয়েছে অভ্যন্তরীণ কমিটি। তাতে বর্ণনা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে কতটা ভয়ঙ্করভাবে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের র্যাগিং করা হত। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের এ ২ ব্লকে থাকতে শুরু করেছিল নদিয়ার প্রথম বর্ষের সেই পড়ুয়া। অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্ট বলা হয়েছে, ওই হস্টেলে সবচেয়ে বেশি র্যাগিং হত এ ২ ব্লকে। র্যাগিংয়ের দিক থেকে সবচেয়ে কুখ্যাত ছিল হস্টেলের এ ২ ব্লকটি। রিপোর্টে ওই ব্লককে ‘মোস্ট নটোরিয়াস’, ‘ফিয়ার-সাইকোসিস’ বা ভয়ের কেন্দ্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে বাংলার প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই মত অভ্যন্তরীণ কমিটির।
আরও পড়ুন: আলু পুরো 'পচা', যাদবপুরে র্যাগিংকাণ্ডে রিপোর্ট জমা, কড়া সবক শেখানোর সুপারিশ
রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, বাকি যে ব্লকগুলি ছিল রয়েছে তাতে অপেক্ষাকৃত কম র্যাগিং হত। মূলত এ২ ব্লকেই সবচেয়ে বেশি র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটত। প্রথম বর্ষের ১৫০ জন পড়ুয়াকে নিয়ন্ত্রণ করত এ ২ ব্লকের সিনিয়র দাদারা। শুধু তাই নয়, বাইরের ব্লক থেকে জুনিয়রদের ধরে এনে এ ২ ব্লকে ভয়াবহ র্যাগিং করা হত। বাকি ব্লকগুলিতে হস্টেল সুপারদের নজরদারি থাকলেও প্রাণভয়ে এ ২ ব্লকে প্রবেশ করতে পারতেন না সুপার। অভ্যন্তরীণ কমিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র নদিয়ার ওই ছাত্রটি ভয়াবহ র্যাগিংয়ের এবং যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছে তা নয়। বাকিদেরও ভয়ঙ্করভাবে র্যাগিং করা হত। প্রায় ১২ থেকে ১৪ মাস ধরে লাগাতার জুনিয়রদের উপর এভাবে চলতে থাকে অত্যাচার।
সাধারণত এ ২ ব্লকে ৯৬ জন আবাসিক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মেস কমিটি এবং হস্টেলের দাদাদের কারণে সেখানে ২৮ জন প্রাক্তন এবং বহিরাগত ঘর দখল করেছিল। শুধু তাই নয়, ৬ অগস্ট থেকে ৯ অগস্ট পর্যন্ত এই ৩ দিন সবচেয়ে ভয়াবহ র্যাগিং হয়েছিল ৫৯, ১০৪, ১০৮, ১১০ এবং ১১৪ নম্বর রুমে। সেখানে দিন রাত সবসময় চলত অত্যাচার।
এছাড়াও সিনিয়ররা জুনিয়রদের বাচ্চা বলেই ডাকত। কার্যত তাদের ক্রীতদাস হিসেবেই থাকতে হত জুনিয়াররদের। তাদের জন্য কঠোর নিয়ম চলত সিনিয়রদের। পড়াশোনার অ্যাসাইনমেন্ট করে দিতে হত। তাছাড়া পালা করে তাদের জামা কাপড় কেচে দিতে হতো। আলমারির উপর ঘণ্টার পর পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হত জুনিয়রদের, দেওয়ালে মুখ ঘষতে হত। এছাড়া ব্যাঙের মতো লাফ এবং খাটের তলায় হামাগুড়ির মাধ্যমে র্যাগিং চলত। যে সমস্ত জুনিয়ারা ভালো করতে পারত না বা আপত্তি জানত তাদের উপরে বেশি অত্যাচার চলত। এই সমস্ত সিনিয়রদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ জানিয়েছে অভ্যন্তরীণ কমিটি।