বিদ্রোহ আজ, বিদ্রোহ চারিদিকে—এখন এমনই আবহ তৈরি হয়েছে নবান্ন বনাম রাজভবনের মধ্যে। কারণ রাজ্যপাল একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে সই করেননি। অথচ হাতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি রয়েছে। তারপরই দেশজুড়ে পালিত হবে স্বাধীনতা দিবস। এই রাজ্যেও তা আড়ম্বরেই পালিত হয় প্রত্যেক বছর। আর প্রত্যেক বছরই স্বাধীনতা দিবসে কিছু বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয় জেল থেকে। নিয়ম অনুযায়ী, কাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তাদের সেই তালিকা রাজ্য সরকার পাঠিয়ে দেয় রাজভবনে। সূত্রের খবর, এবার নবান্ন থেকে পাঠানো বন্দিদের তালিকা–সহ ফাইল পাঠালেও তাতে সই করেননি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বরং আপত্তি জানিয়েছেন।
এই নিয়েই এবার নবান্ন বনাম রাজভবন সংঘাত চরমে উঠেছে। এই ফাইলে রাজ্যপাল সই না করার জেরে এবার স্বাধীনতা দিবসের দিনে ওই বন্দিদের কারাগার মুক্তি দেওয়া নিয়ে বিস্তর জটিলতা তৈরি হয়েছে। নবান্ন এই কাণ্ডের কথা জানতে পেরে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে। যদিও কোনও প্রতিক্রিয়া রাজ্যের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। রাজ্যের কারা দফতর যে ফাইল রাজভবনে পাঠিয়েছিল তা এখনও ওভাবেই পড়ে রয়েছে। এখানে কারাদণ্ডের মেয়াদ, বন্দিদের আচরণ–সহ নানা দিক বিবেচনা করে প্রত্যেক বছরই স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি দেওয়া হয় কিছু বন্দিকে। কিন্তু সেটি কতটা এবার সম্ভব হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারণ এই কাজ করতে রাজভবনের অনুমতি প্রয়োজন।
আর কী জানা যাচ্ছে? সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে এসে দেখা করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে। সেখানে দুটি ফাইল নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেটা বাদল অধিবেশন শুরুর আগে। তারপর এই ফাইলটি পাঠানো হয় কয়েকদিন আগে। সেখানেই বন্দি মুক্তির কথা উল্লেখ করে ফাইল পাঠিয়েছিল কারা দফতর। কিন্তু দু’দিন আগে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে সরব হয়েছিলেন। তারপরই এবার ফাইলে সই করা নিয়ে বেঁকে বসলেন রাজভবনের বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: শহরে জল অপচয় বেড়েছে, রাস্তার স্ট্যান্ড পোস্ট কল খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত মেয়রের
তারপর ঠিক কী হয়েছে? এই কথা জানতে পেরে নবান্নের শীর্ষমহল ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। রাজ্যে এখনও মুক্ত সংশোধনাগার রয়েছে রায়গঞ্জ, লালগোলা, দুর্গাপুর এবং মেদিনীপুরে। সেখানে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সংখ্যা কয়েক হাজার। তাদের মধ্যে থেকেই কিছু বন্দিকে প্রত্যেক বছর শনাক্ত করেন কারা দফতরের কর্তারা। সব দিক বিবেচনা করে কারা দফতরের বন্দি মুক্তি কমিটি এবং যে আদালত বন্দিকে সাজা দিয়েছে সেখান থেকে অনুমতি মিললে নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তারপর তালিকা–সহ ফাইল পাঠানো হয় রাজভবনে। আর রাজ্যপাল ওই ফাইলে সই করলেই তারা মুক্তি পায়। যা এবার হবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।