দক্ষিণ কলকাতা অংশটি অনেক বড়। তবে তার মধ্যে ফুসফুস বলা হয় রবীন্দ্র সরোবর এবং সার্দান অ্যাভিনিউকে। এই গোটা অঞ্চলটি ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। এখানে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট অন্যান্য অনেক এলাকার থেকে আলাদা। এখানের মানুষজনকে জল, কল, নিকাশি, জঞ্জাল–সহ নানা সামাজিক বিষয় নিয়ে ভাবতে হয় না। আর রাজনৈতিক দিক থেকে এই ওয়ার্ড সবসময়ই ডানপন্থী বা দক্ষিণপন্থী ঘরানার। এখানে আগে কংগ্রেস জিতত। তৃণমূল গড়ে ওঠার পর থেকে তা তাদের দিকে চলে যায়। যার জন্য এখানের দীর্ঘদিনের (দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র) সাংসদ ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন মালা রায়। এখানের বিধায়ক দেবাশিস কুমার।
এই ওয়ার্ডে বিজেপি কোনও জায়গা করতে পারেনি। একবার কাউন্সিলর বিজেপি থেকে হলেও পরের টার্মেই মানুষ তা বদলে দেয়। এই কথাগুলি বলতে হচ্ছে কারণ, আজ যখন দেশজুড়ে রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্যস্ত সবাই তখন কলকাতার ফুসফুস বলে রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় তেমন কিছু দেখা গেল না। এমনকী এখানের অবাঙালি পরিবারগুলিও নিজেদের কাজে ব্যস্ত। বেশ কয়েকটি পরিবার টিভিতে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান দেখলেও কেউ রাস্তায় নেমে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেননি।
এদিকে এই এলাকায় দেখা গেল আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবারের কর্মসূচি নিয়ে প্রস্তুতি নিতে। ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মজয়ন্তী। তাই এখানের সার্দান অ্যাভিনিউ’র মোড়ে নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার সঙ্গে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে খাওয়া–দাওয়া করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইসব প্রস্তুতি করা হচ্ছে। এলাকার রাস্তায় ছাউনি করা হয়েছে। রামমন্দির বা রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে তেমন কোনও উন্মাদনা দেখা যায়নি। তবে সকালের দিকে কয়েকজন বিজেপি কর্মী–সমর্থক কাঁধে ঝান্ডা নিয়ে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে লেক অ্যাভিনিউ থেকে কবির রোড পর্যন্ত হেঁটে যায়। তাও হাতেগোনা কয়েকজন। ব্যস, ওইটুকুই।
আরও পড়ুন: রেশন দুর্নীতির কয়েক কোটি টাকা বিদেশে পাচার, বাহকের খোঁজে ইডির কাজ শুরু
অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড় দিয়েই শুরু হয়ে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংহতি মিছিল। এখানের তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বিশাল মিছিল করে হাজরা মোড়ে যায়। সেই মিছিলে আছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রাজ্যের তাবড় নেতা–মন্ত্রীরা। গোটা দক্ষিণ কলকাতা এই মিছিল ঢেকে ফেলেছে রাজপথ। যা যাবে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত। যাঁরা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করেন এবং ছুটি পেয়েছেন তাঁরা আজ বাড়িতে মাংস–ভাত রান্না করে মধ্যাহ্নভোজ সারছেন। এই এলাকার অর্থনৈতিক পরিবেশ তেমনই। তাই অযোধ্যার বিগ ইভেন্ট সার্দান অ্যাভিনিউ বা দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুসে ছাপ ফেলতে পারেনি।