রাজ্যের প্রথমসারির সরকারি হাসপাতাল আর জি করের সুপার সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির উঠেছে। এবার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে যাবতীয় প্রয়াস করলেন আর জি করের সুপার। তিনি নিজের সমর্থনে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ এবং পড়ুয়াদের কাছ থেকে সই সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য ভবনে একটি চিঠি জমা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সেই চিঠিকে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন সন্দীপ ঘোষ। তিনি ডিএমইকে এই চিঠি জমা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। চিঠিতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে আখতারকেই প্রকৃত দোষী বলে দাবি করেছেন সন্দীপ ঘোষ।
আরও পড়ুন: রোগীদের বিনামূল্যে ব্যথা থেকে মুক্তি দিচ্ছে আরজিকর হাসপাতালের পেন ক্লিনিক
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য ভবনে যান সন্দীপ ঘোষ। তিনি যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে আর জি করের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, সহ-চিকিৎসক এবং পড়ুয়াদের সই রয়েছে। সকালে সই সংগ্রহ করার পর বিকেলে স্বাস্থ্য ভবনে হাজির হন সন্দীপ ঘোষ। এ নিয়ে নতুন করে আর জি করের দুর্নীতি বিতর্ক তুঙ্গে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৩ জুলাই ডিআইজির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন প্রাক্তন ডেপুটি সুপার। তাতে তিনি সন্দীপ ঘোষের পাশাপাশি তৃণমূল বিধায়ক তথা রোগী কল্যাণ কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
আখতার অভিযোগ করেছিলেন, আর জি কর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা বর্জ্য কোটি-কোটি টাকায় বাংলাদেশের বাজারে পাচার করা হচ্ছে। তারপরেই তাঁকে বদলি করা হয়। হাসপাতালের বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। সেই সংস্থার তরফেও অভিযোগ করা হয় যে হাসপাতাল থেকে অনেক চিকিৎসা বর্জ্য তাঁরা পাচ্ছিলেন না। যার মধ্যে রয়েছে ব্যবহার করা স্যালাইনের বোতল, তার, সিরিঞ্জ, গ্লাভস প্রভৃতি। এই অভিযোগ ওঠার পরে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য ভবন। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে এই কমিটি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয় অন্যতম অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ। তিনি এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আখতারের বিরুদ্ধেও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
আখতারের দাবি, সুপার সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ২০ শতাংশ কাটমানি খেয়ে প্রচুর বেআইনি কেনাকাটা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, স্কিল ল্যাব করতে খরচ হয়েছে ২ কোটি ৯৭ হাজার টাকা। যা অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল ৬০ লক্ষ টাকায় হয়েছে। এছাড়া আরও বিভিন্ন সামগ্রী বেশি দামে কিনেছেন সুপার। অন্যদিকে, সুদীপ্ত রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সিঁথি এলাকায় নিজের নার্সিংহোমে আর জি কর থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বেআইনিভাবে পাঠিয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, আরও অভিযোগ, আর জি কর মেডিক্যালে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে সমস্ত ভেন্ডার যুক্ত ছিলেন তাদের দিয়েই নিজের নার্সিংহোম সংস্কার এবং বাগানবাড়ি সংস্কার করিয়েছিলেন সুদীপ্ত রায়। এই অভিযোগ সামনে আসতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। তাঁর অভিযোগপত্রে হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং হাসপাতালের আরও বেশ কয়েকজন আধিকারিকের নাম রয়েছে।