এতদিন হুমকি, শর্ত, বার্তা এবং দলের প্রতীক–বিহীন সভা–সমাবেশ থেকে পোস্টার পড়তে দেখা গিয়েছিল। যার নেপথ্যে ছিলেন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তখন তাঁর উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠানো হয়েছিল প্রশান্ত কিশোরের মাধ্যমে। সেখানে ভোট কৌশলী উপস্থিত হয়েছিলেন। অনুপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু নিজের বাড়িতেই। ফোনে কথা বলে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। তারপর তিন সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। কিন্তু তারপরও রফাসূত্র অধরাই ছিল। এই পরিস্থিতিতে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের (এইচআরবিসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। নতুন চেয়ারম্যান হলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহণ দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানাল, হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের চেয়ারম্যানের পদে নিয়োগ করা হল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এখন প্রশ্ন হল এই পরিবর্তন কেন? বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন বার্তা দিতে চাইল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার? দলীয় সূত্রে খবর, এটা একটা হালকা বার্তা দেওয়া হল শুভেন্দুকে। এটা কোনও শাস্তি নয়। এই সিদ্ধান্ত থেকে বার্তা দেওয়া হল দলের উর্দ্ধে কেউ নন। দলের গাইডলাইন মেনে না চললে সরে যেতেই হবে। তা সে যত বড় মাপের নেতা হন না কেন! আর শুভেন্দু যখন থেকে বেসুরো গাইতে শুরু করেছেন তখন সব থেকে কড়া আক্রমণ করেছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলের আর একটা সূত্র বলছে, শুভেন্দুকে বার্তা দেওয়া হল তৃণমূল কংগ্রেসে কেউ অপরিহার্য নয়। আর দলের সাংসদকে পুরষ্কৃত করা হল। এখন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এইচআরবিসি’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশের আগে পর্যন্ত তিনিই পরিবহণ দফতরের অধীনে এই গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাবেন। শুভেন্দু অধিকারী–সহ দফতরের অন্য আধিকারিকদের নতুন নির্দেশের কপি পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালের আগে পর্যন্ত এই পদে ছিলাম। শুভেন্দু পদত্যাগ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী যে দায়িত্ব দেবেন, আমি তা পালন করব। আমি খুশি।’
এখন প্রশ্ন, আচমকা শুভেন্দু কেন ইস্তফা দিলেন? এই নিয়ে এখনও তিনি কিছু স্পষ্ট কিছু করেননি। তবে সাম্প্রতিককালে শুভেন্দুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল দলের। নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর পাল্টা সভা করেছিলেন ফিরহাদ হাকিম। নাম না করে পরিবহণমন্ত্রীকে নিশানা করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুর সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে দু’দফায় বৈঠক করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। বাকি ছিল তৃতীয় দফার বৈঠক। সেই বৈঠকে তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তার আগেই এই পরিবর্তন ঘটে গেল। সূত্রের খবর, এই সকল প্রচেষ্টা দলের পক্ষ থেকে করা হলেও শুভেন্দুর শর্তের কাছে মাথানত করেননি কেউ। বরং এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বুঝিয়ে দেওয়া হল, কারও জন্য কিছু থেমে থাকবে না।
যদিও শুভেন্দুর দলত্যাগের জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে সৌগত রায় বলেছিলেন, ‘শুভেন্দুকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ও তৃণমূলেই আছে। আগামী নির্বাচন আমরা একসঙ্গেই লড়ব। অন্য কোনও কথা তো এখনও পর্যন্ত বলেনি। খেজুরিতে ও যা বলেছে, তাতেই ওর ইচ্ছেটা স্পষ্ট। দলবিরোধী কিছু বলতে ও ইচ্ছুক নয়।’ দলের অন্দরে সব যখন ঠিকঠাকই রয়েছে, তাহলে কেন বারবার রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করতে হচ্ছে নেতা–মন্ত্রীদের? উত্তরে সৌগত সাফ জানান, ‘শুভেন্দুর সঙ্গে কেন এতবার বসতে হচ্ছে, তার উত্তর দেব না।’ তবে অখিল গিরির আলটিমেটাম যেন কাজ করল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।