চলে গেলেন রাজ্যের দুই চিকিৎসক। করোনা আক্রান্ত হয়ে একদিনেই প্রয়াত হলেন প্রথম সারির দু’জন যোদ্ধা। প্রথমজন প্রবীণ ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞ জিএস ভট্টাচার্য ও দ্বিতীয়জন আসানসোল জেলা হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসক অলোক মুখোপাধ্যায়। শনিবার সল্টলেকের আমরি হাসপাতালে মৃত্যু হয় চিকিৎসক জিএস ভট্টাচার্যর। করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই চিকিৎসক ভেন্টিলেশনে ছিলেন।
জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই চিকিৎসক জিএস ভট্টাচার্য করোনা আক্রান্ত হয়ে ভরতি ছিলেন কলকাতার আমরি হাসপাতালে। গতকাল থেকে অবস্থার অবনতি হয় তাঁর। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। মৃত্যু হয়েছে বিশিষ্ট এই চিকিৎসকের।
অন্য দিকে, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় চিকিৎসক অলোক মুখোপাধ্যায়ের।কয়েকদিন আগে করোনা সংক্রমণ নিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভরতি হন তিনি। পরে অবস্থার অবনতি হলে, তাঁকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানেই এদিন মৃত্যু হয় তাঁর।
আসানসোল জেলা হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন অলোক মুখোপাধ্যায়। হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, ১০—১২ দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন অলোকবাবু। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ। প্রথমে আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। অবস্থার অবনতি হলে, তাঁকে দুর্গাপুরের বেসরকারি নার্সিংহোমে ভরতি করা হয়৷ আইসিইউতে রাখা হয়েছিল প্রথমে। পরে সুস্থ হয়ে উঠলে, তাঁকে তিন দিন আগে সাধারণ বেডেই দেওয়া হয়। সুস্থই ছিলেন। হঠাৎ গতরাতে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। আজ ভোররাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর থেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে চিকিৎসকদের মৃত্যু হয়েই চলেছে। এই মৃত্যুমিছিল শুরু হয়েছিল ২০২০ সাল থেকে। গত মঙ্গলবারই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল আরও দুই চিকিৎসকের। তাঁদের মধ্যে একজন প্রবীণ হলেও, আরেক জনের বয়স ছিল মাত্র ৪৭ বছর। ডা. পার্থ প্রতীম লাহা ও ডা. প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতেও আঁতকে উঠেছিলেন অনেকে।
কারণ,ডা. পার্থ প্রতীম লাহা ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজই নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। টানা ১০ দিন বাড়িতেই ছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরই অবস্থার অবনতি হয় তাঁর। শেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। টিকা নিলে করোনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অসুখের ভয়াবহতা অনেক কম থাকবে। বিশেষজ্ঞদের এই দাবিকেই যেন প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে ডা. লাহার মৃত্যু।
এদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবারই মৃত্যু হয়েছে ৮৪ বছরের প্রবীণ চিকিৎসক ডা. প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়ের। হাওড়ার এই প্রবীণ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। আবার, কয়েক দিন আগেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল চিকিৎসক অনুপ মুখোপাধ্যায়ের। তিনিও গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।