ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে ৮টা। উল্টোডাঙা উড়ালপুলের ধারে এসে দাঁড়াল একটি মেয়ে। দূর থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, সে নাবালিকা। আর উড়ালপুলের ধারে উপর থেকে ঝুঁকে নীচের দিকে তাকাচ্ছিল সে। কিছু একটা কাণ্ড ঘটাতেই যেন সে উপস্থিত হয়েছে সেখানে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল উড়ালপুলের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করছে নাবালিকা। এই দৃশ্য চোখে পড়ে যায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের। তখন সময় নষ্ট না করে ওই নাবালিকাকে আত্মহত্যা করা থেকে আটকাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এক ট্রাফিক পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব–ইনস্পেক্টর। তোলপাড় হয়ে যায় গোটা চত্ত্বর।
কিন্তু চোখে যখন পড়েছে তখন ওই নাবালিকাকে তো বাঁচাতেই হবে। ধনুকভাঙা পণ করে তখন পাইলট কার নিয়ে রঙরুটে ছুটলেন ওই ট্রাফিক পুলিশ। তার কিছুক্ষণ আগে ওই কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ উল্টোডাঙা উড়ালপুলের নীচে ভিআইপি মুভমেন্টের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আর তাই কলকাতা পুলিশের ওয়্যারলেস ব্রাঞ্চের পাইলট কার দাঁড়িয়ে ছিল। আর ওই পাইলট কারের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব–ইনস্পেক্টর বিপ্লব সেন। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন পুলিশকর্মীও। বিষয়টি চোখে পড়তেই তাঁদেরকে জানান বিপ্লব সেন। আর নিজেই উদ্যোগ নেন ওই নাবালিকাকে বাঁচানোর। তারপর শুরু হয় দৌড়।
আরও পড়ুন: অর্জুন সিং কেন ডেঞ্জারাস? শান্তনু ঠাকুর কি টাকা তুলেছেন? বিস্ফোরক তথ্য দিলেন মমতা
এই পরিস্থিতি যে পুলিশ একা দেখেছিলেন তা নয়। পথচলতি মানুষজনও বিষয়টি দেখতে পান। আর তাঁরা উড়ালপুলের উপরে ওই নাবালিকাকে উঁকি–ঝুঁকি মারতে দেখেই নীচে দাঁড়িয়ে থাকা পাইলট কারের কাছে গিয়ে আঙুল দিয়ে ওই নাবালিকার কাণ্ড দেখান। যা দেখে চমকে যান পুলিশ কর্মীরা। এই ঘটনা দেখতে পান বিপ্লব সেনও। তাই সময় নষ্ট না করে তিনি কলকাতা পুলিশের লালবাজারে বিষয়টি জানান। আর তার পরই নিজেই উদ্যোগ নিয়ে একেবারে রঙরুটে গাড়ি ঘুরিয়ে পৌঁছে যান নাবালিকার কাছে। আর ওই নাবালিকাকে আত্মহত্যা করা থেকে আটকান।
ততক্ষণে কলকাতা পুলিশের লালবাজার কন্ট্রোল রুমে বিষয়টি জানানো হয় এবং তখন উল্টোডাঙা ট্রাফিক গার্ডেও খবর পৌঁছে যায়। ফোন করে এমন ঘটনার কথা জানানো হয় মানিকতলা থানাতেও। যদিও এই উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে অফিসার বিপ্লব সেন ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে ফেলেন। এই আবহে মানিকতলা থানার দু’জন মহিলা অফিসার এসে সেখানে হাজির হন। উপস্থিত হন উল্টোডাঙা ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ কর্মীরাও। আত্মহত্যা রোধ করেন কলকাতা পুলিশের অফিসাররা। এএসআই বিপ্লব সেন সঠিক সময়ে উদ্যোগ না নিলে আত্মহত্যা ঠেকানো যেত না।