আচার্য হিসেবে স্বাধীনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবেন রাজ্যপাল। তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য সরকার। এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেইসঙ্গে কেরলের কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পুনরায় নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, কেরল সরকার যে কাজটা করেছে, সেটা পুরোপরি অযাচিত। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের হাতে যে ক্ষমতা আছে, তাতে অকারণে হস্তক্ষেপ করেছে কেরল সরকার।
যে মামলায় সেই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, সেটার সূত্রপাত হয়েছিল ২০২১ সালে কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে জি রবীন্দ্রনকে পুনরায় নিয়োগ করার পরে। যে নিয়োগ প্রক্রিয়া খারিজ করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জেবি পাদ্রিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রও। শীর্ষ আদালতের মতে, উপাচার্যের পদে কাকে বসানো হবে, তা নিয়ে রাজ্যপাল যখন পদক্ষেপ করছিলেন, তখন নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে সেই পদে বসিয়ে নিজেদের অধিকারের সীমা ভঙ্গ করেছে রাজ্য সরকার।
বিচারপতি পাদ্রিওয়ালা বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে উপাচার্য হিসেবে রবীন্দ্রনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আচার্য (রাজ্যপাল) জারি করলেও সেই সিদ্ধান্তের উপর বহিরাগতের প্রভাব আছে। অন্যভাবে বিষয়টা বলতে গেলে (রাজ্যপাল যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন, তাতে) অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার।’ সেইসঙ্গে রবীন্দ্রনের পুুনর্নিয়োগ খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আর সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় পশ্চিমবঙ্গের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য। কারণ রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে একাধিকবার সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে রাজভবন এবং নবান্ন। রাজ্য সরকারের দাবি, কোনওরকম আলোচনা না করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিজের পছন্দের লোককে নিয়োগ করছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যদিও রাজভবনের পালটা যুক্তি, আচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের অধিকার আছে রাজ্যপালের।
সেই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা থেকে এটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে আচার্য হিসেবে স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যপ্রণালী বা পরিচালনার দায়িত্ব থাকবেন রাজ্যপাল। তাঁর সেই অধিকার আছে। যে কাজে রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটিতে RSS ঘনিষ্ঠ, চর্চা তুঙ্গে