এর আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা বলেছিলেন, বুথ ছেড়ে যাওয়া ভোটকর্মীদের বিরুদ্ধে এফআইআর হবে। তবে রাতে সুর বদল কমিশনের। জানানো হল, ক্ষতিগ্রস্ত ভোটকর্মীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এর আগে গতকাল রাজীব সিনহার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করার দাবিতে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল সরকারি কর্মীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। এরই মাঝে কমিশন সূত্রে জানা যায়, যেসকল ভোটকর্মীরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। যদিও কমিশনের খাতায় 'ক্ষতিগ্রস্তের' সংজ্ঞা কী, কত করেই বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। (পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় খবর এবং লাইভ আপডেট জানতে ক্লিক করুন এখানে)
উল্লেখ্য, গতকাল রাজ্যের একাধিক জেলায় দেদার ছাপ্পা পড়েছে। কোথাও আবার 'প্রতিরোধের' নামে চলেছে তাণ্ডব। ভোটকর্মীদের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে কোথাও বুথ দখল করা হয়েছে, কোথাও ভোটকর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক জায়গায় আবার ভোট বানচাল করতে ব্যালট বাক্সে জল ঢালা হয়েছে, বা ব্যালট বাক্স তুলে নিয়ে গিয়ে জলে বা নর্দমায় ফেলা হয়েছে। এই সব তাণ্ডবের মাঝে অনেক ভোটকর্মীই অসহায় বোধ করেছেন। আহত হয়েছেন অনেকেই। অনেকের চোখে মুখেই ফুটে উঠেছে আতঙ্ক। কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। বলেছেন, 'এই চাকরি না করলেই ভালো হত।' অনেকেই আবার বলেছেন, 'আর ভোটের দায়িত্ব পালন করব না। আমাদেরও তো পরিবার আছে নাকি!' এই সব চিত্র দেখে যখন গোটা বাংলা হতবাক, তখন রাজীব সিনহাকে বলতে শোনা যায়, 'পঞ্চায়েত ভোটে বুথে হিংসার করণে যে সব ভোটকর্মীরা বুথ ছেড়ে ফিরে এসেছেন তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে'।
প্রসঙ্গত, গতকাল পঞ্চায়েত ভোট চলাকালীন বহু বুথে হিংসার ঘটনা ঘটে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রহসনে পরিণত হয়। এই আবহে বহু ভোটকর্মী বুথ ছেড়ে ডিসিআরসি-তে ফিরে আসেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন তাঁরা। বুথে যে এক-দু'জন পুলিশকর্মী মোতায়েন করা ছিল, দুষ্কৃতীদের সামনে তাঁরাও 'আত্মসমর্পণ' করে দিয়েছিলেন। এর জেরে হাত তুলে দেন বহু ভোটকর্মীও। আবার অনেকে ভোটলুঠ রুখতে গিয়ে আহত হন। গত নির্বাচনে দুষ্কৃতীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক ভোটকর্মী। সেই পরিণতির সম্মুখীন হতে চাননি কেউই। এই আবহে রাজীব সিনহার যুক্তি ছিল, 'যে সব ভোটকর্মী ভোটকেন্দ্র ছেড়ে চলে এসেছেন তারা বেআইনি কাজ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর দায়ের করবে কমিশন।' তবে ভোটকর্মীদের দাবি ছিল, নিরাপত্তা ছাড়া ভোটের কাজ করব কীভাবে? তাঁদের দাবি, নিজেদের প্রাণসংশয় নিয়ে ভোটেক দায়িত্ব পালন করা যায় না। আর সত্যি তো। যেখানে পুলিশ নিজেরাই অবাধ ভোটলুঠ ঠেকাতে পারেনি। সেখানে এই ভোটকর্মীরাই বা কী করতেন? এই পরিস্থিতিতে এবার 'কড়া পদক্ষেপের' সুর বদল করে 'ক্ষতিপূরণ' দেওয়ার কথা বলছে কমিশন।