পঞ্চায়েত নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে আবার তেতে উঠল রাজ্য–রাজনীতি। কারণ আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সরাসরি কাঠগড়ায় তুললেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। আর ভর্ৎসনা করলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে। সংঘাত আগেই লেগেছিল। বাকি ছিল প্রকাশ্যে আসে। রাজ্যপালের তলবে রাজভবনে না যাওয়া, নির্দেশ অমান্য করা–সহ নানা অভিযোগ রয়েছে রাজীব সিনহার বিরুদ্ধে। এবার সবটাই প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন বড়লাট।
আজ, বৃহস্পতিবার পিস কনফারেন্সের আয়োজন করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেখানেই রাজ্যপাল তুলোধনা করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে। চরম ভর্ৎসনা করে রাজ্যপাল বলেন,‘আপনি আপনার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। আগুন ও রক্ত নিয়ে রীতিমতো খেলা চলছে। এত হিংসার জন্য দায় কার? আমি দেখেছি সন্তান হারানো মায়ের চোখের। পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসায় খুনি কে? হিংসার ছবি দেখে আমি উদ্বিগ্ন। রক্ত নিয়ে এই খেলা বন্ধ করতেই হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের গণতন্ত্রকে খুন করা হয়েছে।’ এই ভাষাতেই তোপ দাগতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। যা জোর চর্চার সৃষ্টি করেছে।
আর কী বলেছেন রাজ্যপাল? আজও মুর্শিদবাদ–সহ নানা প্রান্তে বোমাবাজি, গুলি চলেছে বলে খবর। এমনকী বোমা বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সিপিএম প্রার্থীকে গুলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এইসব ঘটনার খবর আসার পর রাজ্যপাল প্রচণ্ড রেগে যান। আর তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের গণতন্ত্রকে খুন করা হয়েছে। খুনি কে? রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সেটা আপনার জানা উচিত। নির্বাচনের সময় আপনি মানুষের জীবনের রক্ষাকর্তা। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করতে আপনাকে সব ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারপরেও হিংসা হচ্ছে, রক্ত ঝরছে, প্রাণহানি হচ্ছে। ক্যানিং, ভাঙড়, কোচবিহার থেকে মুর্শিদাবাদ সর্বত্র একই ছবি। বাংলার পরিস্থিতি দেখলে শেক্সপিয়রও বলতেন, নরকে শূন্য, সব শয়তান এখানে। মানুষের চোখের জল দেখেছি। আজ শিশুরা কাঁদছে। মানুষের রক্ত দিয়ে রাজনৈতিক হোলি খেলা বন্ধ করা হোক।’
আরও পড়ুন: সায়নীর পাঠানো নথি অসম্পূর্ণ, অসন্তুষ্ট ইডি অফিসাররা আরও জোরদার তদন্তে নামল
তারপর ঠিক কী ঘটল? আজ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারের শেষ–পর্ব। আর ৮ জুলাই গ্রামবাংলা জুড়ে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ঠিক তার প্রাক্কালে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং কমিশনারকে চূড়ান্ত ভর্ৎসনা করলেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, ‘আমি এখানে জেনে এসেছিলাম যে এটা গুরুদেবের ভূমি। চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির। আমার কিন্তু মোহভঙ্গ হয়েছে। হিংসা দীর্ণ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি দেখেছি, মানুষের মনে ভয়। তাঁরা মাথা নীচু করে বেঁচে আছেন। মানুষ এখন একটাই প্রশ্ন করছে, আমাদের জীবন ফেরত দিন। নির্বাচনকে বুলেটপ্রুফ বানান, ব্যালটপ্রুফ নয়। বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করুন। সিসিটিভি বসিয়ে নজরদারি চালান।’ পাল্টা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘বিজেপির দালালের মতো কাজ করছেন রাজ্যপাল। নেতাজি টুপি পরলেই নেতাজি সাজা যায় না।’