পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর্যালোচনা বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই ফুঁসে উঠলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এমনকী এখনের রাজ্য নেতৃত্বের জন্যই এমন পরাজয় হয়েছে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। তাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে প্রকাশ্যে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়লেও দিলীপকে কেউ ঠেকাতে পারেননি। চাঁচাছোলা ভাষায় রাজ্য নেতৃত্বের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জেতা আসন হারা নিয়ে আওয়াজ সপ্তমে তুলেছিলেন বলেই সূত্রের খবর। আর সবটা হজম করা ছাড়া বিশেষ কোনও উপায় দেখতে পাননি তাঁরা। অগত্যা আগামী ১৯ জুলাই কলকাতায় মহামিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংগঠন মজবুত করার বার্তা দিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করা হয়।
এদিকে গত ২১ মে রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক হয়েছিল। তখন রাজ্যের সংগঠনের হাল নিয়ে সরব হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। গতকাল রবিবার দলের সল্টলেক দফতরে উত্তরবঙ্গে কেন ভাল ফল হল না? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দিলীপ ঘোষ। জেতা জায়গায় পরাজয় এবং নির্বাচনের দিন এজেন্টদের বুথ ছেড়ে আগে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হন মেদিনীপুরের সাংসদ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘আমি যখন বৈঠকে ছিলাম তখনই দিলীপদা রাজ্য নেতৃত্বের ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাজ্য নেতারা এবং জেলা নেতারা সঠিক ভূমিকা পালন করেছিলেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাতেই সরগরম হয় বৈঠক।’
অন্যদিকে এই বৈঠকে দিলীপ ঘোষ চড়া মেজাজে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে দিলীপ ঘোষ ছিলেন রাজ্য সভাপতি। তখন পশ্চিমাঞ্চলে গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রথম জয়ের মুখ দেখেছিল বিজেপি। তার জেরে তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রীর পদ গিয়েছিল। সেখানে এবার গোহারা কেন? প্রশ্ন তোলেন দিলীপ। উওরবঙ্গ, ঝাড়গ্ৰামে ফলাফল খারাপ হল কেন? প্রশ্ন তুলে সংগঠন দুর্বল বলে সুর চড়ান তিনি। তখন সুকান্ত মজুমদার এবং কয়েকজন পাল্টা বলেন, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালে পঞ্চায়েতের আসন বেড়েছে বিজেপির। তখন পাল্টা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বাম, কংগ্রেস, বিজেপি সবাই দ্বিগুণ আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। সবারই আসন তাই বেড়েছে। এতে হাতিঘোড়া কিছু প্রমাণ হয় না। বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট যে ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২২ শতাংশ হয়েছে সেটাই বাস্তব ঘটনা’। এমনই সুর চড়িয়েছেন তিনি বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ‘কোনও রাজনৈতিক চাপ দেওয়া হয়নি’, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে মন্তব্য বাগ কমিটির প্রধানের
আর কী জানা যাচ্ছে? এই বৈঠকে চার কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য এবং আশা লাকড়া উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই ‘মেজাজের সুরে’ দিলীপ ঘোষ সরব হন বলে বিজেপি সূত্রে খবর। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির আসনসংখ্যা এবার কিছুটা বেড়েছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে বিজেপি সব মিলিয়ে ৬৫৭০টি আসনে জিতেছিল। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজারের একটু বেশি হয়েছে। আবার এলাকা পুনর্বিন্যাসের কারণে এবার ১৫ হাজারেরও বেশি আসনও বেড়েছে। তাই তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিজেপির সাফল্য–ব্যর্থতায় বিরাট হেরফের হয়নি। বরং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপি ২ কোটি টাকা খরচ করেছিল, এবার খরচ করেছে প্রায় ৫২ কোটি। ২৫ গুণ বেশি খরচ করেও ফল তলানিতে বলে সূত্রের খবর।