সাম্প্রতিককালে কংগ্রেসের ইস্তাহারে থাকা 'সম্পদ পুনর্বণ্টন' ইস্যু নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। রোজদিন এই নিয়ে কংগ্রেসকে তোপ দাগছেন। এরই মাঝে গতকাল রাহুল গান্ধী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত 'সম্পদ পুনর্বণ্টন' ইস্যু নিয়ে মুখ খোলেন এবং আমেরিকার মতো উত্তরাধিকার আইন কার্যকর করার দাবি তোলেন। এই আবহে বিজেপি নতুন করে কংগ্রেসকে তোপ দাগতে শুরু করেছে। এই আবহে অস্বস্তিতে পড়ে স্যাম পিত্রোদার মন্তব্য দায় নিজেদের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইল কংগ্রেস। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কার্যত রেগে যান কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, 'দেশে সংবিধান আছে। এভাবে কিছু করা যায় না। আমাদের এই ধরনের কিছু করার ইচ্ছেও নেই। তাঁর কথা কেন আমার মুখে বসাচ্ছেন।' (আরও পড়ুন: 'ওরা নিজেদের ভাবে…', ভারত নিয়ে নাক গলানোর জেরে পশ্চিমী মিডিয়াকে তোপ জয়শঙ্করের)
আরও পড়ুন: পতঞ্জলি মামলায় বারবার সুপ্রিম ধমক খেয়ে ফের 'বড় আকারের ক্ষমা প্রার্থনা' রামদেবের
আরও পড়ুন: VVPAT'র ১০০% ভোট গণনা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে ডাকা হল নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের
তবে কী বলেছেন স্যাম? ইন্ডিয়ান ওভারসিস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদা সম্প্রতি জানান, তাঁর দল ইস্তাহারে যে সম্পদ পুনর্বণ্টনের কথা বলেছে, তা তিনি সমর্থন করেন। শুধু তাই নয়, আমেরিকার মতো উত্তরাধিকার আইন প্রণয়নেরও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকার সূত্রে সেই সম্পত্তির পুরোটা সন্তানদের পাওয়া উচিত নয়। এই আবহে স্যাম পিত্রোদার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (জনসংযোগ) জয়রাম রমেশ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখেন, 'স্যাম পিত্রোদা একজন পরামর্শদাতা, বন্ধু, দার্শনিক, এবং পথপ্রদর্শক... তবে স্যাম পিত্রোদা অনেক বিষয়ে স্বাধীনভাবে তাঁর মতামত প্রকাশ করেন। অবশ্যই, গণতন্ত্রে একজন ব্যক্তি তাঁর ব্যক্তিগত মতামত নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তবে এর মানে এই নয় যে স্যাম পিত্রোদার মতামত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। অনেক সময়ই স্যাম পিত্রোদার কথার সঙ্গে আমাদের অবস্থান মেলে না। এই আবহে তাঁর মন্তব্যগুলি নিয়ে এখন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করার মরিয়া প্রচেষ্টা চলছে। নরেন্দ্র মোদীর বিদ্বেষপূর্ণ ও দুষ্টু নির্বাচনী প্রচারের অংশ এটা; শুধুমাত্র মিথ্যা এবং আরও মিথ্যা বলা হবে।' (আরও পড়ুন: ২০১৬ প্যানেল বাতিলে স্কুলগুলিতে কতটা শূন্যতা তৈরি হবে? সামনে বিস্ফোরক পরিসংখ্যান)
আরও পড়ুন: 'যোগ্যদের' কী হবে? চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক মধ্য শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির
এর আগে স্যাম পিত্রোদা বলেছিলেন, 'আমেরিকায় এই উত্তরাধিকার আইন আছে। এর ফলে, কারও কাছে ১০০ মিলিয়ন ডলার সম্পত্তি আছে। তবে সে মারা যাওয়ার পরে সেই সম্পত্তির ১০০ শতংশ তাঁর সন্তানরা পাবে না। হয়ত সেই ব্যক্তি নিজের সন্তানের জন্য ৪৫ শতাংশ সম্পত্তি রেখে যেতে পারবে। বাকি ৫৫ শতাংশ সম্পত্তি সরকার নিয়ে নেবে।'
আরও পড়ুন: 'গোয়ার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সংবিধান', দ্বৈত নাগরিকত্বের দাবি কংগ্রেস প্রার্থীর
স্যাম পিত্রোদার কথায়, 'এটা বেশ আকর্ষণীয় আইন। এতে বলা হয়েছে, নিজের সময়কালে তুমি অনেক ধন-সম্পত্তি কামিয়েছো। এবার যাওয়ার সময় জনসাধারণের জন্য় এই সম্পত্তি রেখে যাও। পুরোটা না। তবে আর্ধেক। আমার মনে হয় এটা খুবই ন্যায্য একটা আইন।' এদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ শানিয়ে স্যাম বলেন, 'তিনি কংগ্রেসের ইস্তাহারের কথা তুলে ধরে যেভাবে বলছেন, তাতে আমার উদ্বেগ হচ্ছে। তাঁর মাস্তিষ্ক নিয়ে উদ্বেগ হচ্ছে।' কংগ্রেস নেতা বলেন, 'ভারতে এই ধরনের কেউ আইন নেই। যদি কারও ১০০০ কোটি টাকা থাকে, তাহলে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর সন্তানরাই সব সম্পত্তি পান। জনসাধারণ কোনও কিছু পায় না। এই ধরনের ইস্যু নিয়ে লোকের আলোচনা করা উচিত।'
স্যাম পিত্রোদা বলেন, 'আমরা যখন সম্পত্তি পুনর্বণ্টনের কথা বলছি, তখন আমরা নতুন নীতির কথা বলছি। এমন নীতি যা সাধারণ মানুষের জন্য মঙ্গলময় হবে। ধনকুবেরদের জন্যে নয়। আজ ভারতে ন্যূনতম মজুরি নেই। যদি আজ ন্যূনতম মজুরির নীতি কার্যকর করা হয়... বলা হয় যে গরিবদের এই টাকা দিতেই হবে, সেটাই সম্পত্তি পুনর্বণ্টন। আজকে দেশের বড়লোকরা নিজেদের গরিব চাকরদের টাকা দেয় না। কিন্তু দুবাই, লন্ডনে গিয়ে ছুটি কাটানোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে।'