‘আমি অনির্বাণ। আমার এরপরের অভিনয় ১৫ জানুয়ারি রবীন্দ্রসদন মঞ্চে। এসে মেরে যান..’, রাজ্যের শাসকদলকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
রাজ্যে নাট্য উৎসব ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড। সম্প্রতি নাট্যকর্মী অমিত সাহাকে মারধর ও গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর বেলেঘাটা পার্টি অফিসে নাট্যোৎসব করার আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলেন অভিনেতা তথা ‘বিদূষক নাট্যমণ্ডলী’র নাট্য পরিচালক অমিত এবং তাঁর দলের সহকর্মী। সেখানেই তাঁদের সঙ্গে অভব্য আচরণ এবং প্রহারের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতা অলোক দাসের বিরুদ্ধে।
ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানালেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এই প্রথম সরাসরি শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তিনি। অমিতের পাশে দাঁড়ান টলিউডের একাংশ। ২৮ ডিসেম্বর বেলেঘাটার রাসমেলা মাঠে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন অভিনয় জগতের অনেকেই। শ্যুটিং থাকার ফলে হাজির থাকতে পারেননি অনির্বাণ।
আরও পড়ুন: ‘বাবাকেই তো নদীর পাড়ে রেখে এসেছি’, পিতৃবিয়োগের পর আবেগঘন পোস্ট করলেন চঞ্চল
কলকাতার বুকে নাট্য অভিনেতাকে এভাবে চড়-চাপড় মেরে ধাক্কা দিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, আরজে সায়ন ঘোষের মতো টলিউড ব্যক্তিত্বরা এ বিষয় সুর চড়িয়েছেন। সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অনির্বাণ বলেছেন, ‘ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না, এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে!’
শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করে খোলা চিঠি লিখেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিনেতা-পরিচালক লিখেছেন, ‘আজ বেলেঘাটাতেই শ্যুটিং করছি, কিন্তু খুবই টাইট শিডিউল থাকায় সভাতে উপস্থিত থাকতে পারছি না। কিন্তু আমি এই সভায় উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলাম, কারণ গায়ে হাত উঠেছে। নিশ্চয়ই আগেও উঠেছে, অভিনেতার গায়ে, নাট্যকর্মীর গায়ে। সুদূর বা অদূর ইতিহাসে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমার জানার মধ্যে এই প্রথম হাত উঠেছে। আমি প্রতিবাদ করছি, আরও অনেকের সঙ্গে, এটা জেনেই, যে এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে। যার গায়ে হাত উঠেছে, তার গায়ে আবার হাত উঠতে পারে শীঘ্রই, এবং যিনি হাত তুলেছে, তিনি তার সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের অনেকগুলো সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন।'
শিল্পীদের গায়ে হাত তোলার ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে অনির্বাণ আরও লেখেন, 'কে জানে হয়তো কালের অদ্ভুত নিয়মে একদিন বাংলার সংস্কৃতি মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন, দল বদলালে হয়তো ভারতেরও। এটা বা এ রকম কিছুই হয়তো হবে। আমি এই ঘটনাকে বুঝে নিতে চাইছি রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে।'
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রসঙ্গ তুলে অভিনেতার লেখেন, ‘আজ থেকে ১২ দিন আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন বাকস্বাধীনতার সপক্ষে বক্তৃতা করে গেছেন। শাহরুখ খান সোশ্যাল মিডিয়ার ঘৃণাবাহিনীকে এক হাত নিয়েছেন, সারা ভারতে মুক্তমনা মানুষ হাততালি দিয়ে উঠেছেন। সে দিন যারা মঞ্চে ছিলেন, তারাও দিয়েছেন। তার কিছু দিন পরেই অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া মার খেয়ে গেলেন, নাট্য উৎসব আয়োজন করার জন্য। একই রাজ্যে! কেন? কারণ অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া পশ্চিমবঙ্গের বোধ করি একটি ভোটকেও ডিস্টার্ব বা পেট্রনাইজ করতে পারেন না। অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান পারেন।'
রাজনৈতিক দলের উপর একরাশ ক্ষোভ উগরে অভিনেতা লিখেছেন, ‘আমরা নাটক ছেড়ে একটা মার খাওয়ার উৎসবের দিকে এগিয়ে যাই। আমরা রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াই। প্রতিটি অঞ্চলের পার্টি অফিসে আমরা আবেদন পত্র জমা দিই আমাদের নাটক অভিনয়ের দিন ও স্থান সমেত, আমাদের যেন এসে বেদম মার দেওয়া হয়, যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয় হাড়ে হাড়ে যে ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান না হলে বেশি লাফাতে নেই। সারা ভারতবর্ষের সিনেমা ও থিয়েটার অভিনেতারা যেন জানতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গে এক অভূতপূর্ব আনন্দযজ্ঞ শুরু হয়েছে, ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না, এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে।এই শিক্ষা সারা দেশ আমাদের রাজ্য থেকেই পাক।'
শেষে লেখেন, 'চলুন, অভিনয় চর্চা, গানবাজনা ছেড়ে আমরা আগে আমাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বটা বুঝে নিই আমাদের আজকের বাস্তবতায়।আবেদন পত্র জমা দেওয়া শুরু হোক। অখ্যাত, বিখ্যাত, নামী, অনামী সমস্ত অভিনেতারা চলুন এক যোগে মার খাওয়ার আবেদন জানাই।আমি অনির্বাণ।আমার এর পরের অভিনয় ১৫ই জানুয়ারি রবীন্দ্র সদন মঞ্চে। এসে মেরে যান। কারণ এই দিন এর অভিনয়ে ভোট রাজনীতির কোনো মুনাফা নেই, এমন ফালতু ঘটনা রাজ্যে প্লিজ একটাও ঘটতে দেবেন না, অনুরোধ। সবশেষে কেক উৎসবের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।’