১০ জুন শুরু হচ্ছে মেগা সিরিয়ালের শুটিং। ছন্দে ফিরতে চলেছে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি। থাকবে বিধিনিষেধ এবং সতর্কতা। আশাবাদী সকল আর্টিস্ট ও কর্মীরা। যাতে সকলেই কাজে ফিরতে পারেন সে বিষয়েও নজর দেওয়া হচ্ছে। অভিনেতা অর্কজ্যোতি এবং সায়ক HT Bangla-কে জানালেন তাঁদের মতামত।
টলি পাড়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস। জুন মাসেই আবার ছন্দে ফিরতে চলেছে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি। চ্যানেলের তরফ থেকে এমনই জানানো হয়েছে আর্টিস্ট ও টেকনিশিয়ানদের। খুব সাবধানে এবং সব রকম সচেতনতা অবলম্বন করেই চলবে মেগা সিরিয়ালের শুটিং। যেমন শিশু শিল্পী ও বয়স্ক অভিনেতাদের ক্ষেত্রে থাকবে বিশেষ নিয়মবিধি। ফ্লোরে একসঙ্গে ৩৫জনের বেশি থাকতে পারবেন না। নিদৃষ্ট দূরত্ব রেখেই এপিসোড শুট করা হবে। ঘনিষ্ঠ কোনও দৃশ্য থাকবে না। মেক-আপ এবং কস্টিউমের ক্ষেত্রেও থাকছে কড়াকড়ি। এছাড়াও থাকছে নানাবিধ নিয়মাবলী ও শর্ত। তবুও সব বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে বহুদিন পর ফ্লোরে ফিরতে পারবেন জেনে খুশি টেলিভিশন দুনিয়ার সকল অভিনেতা অভিনেত্রী এবং টেকনিশিয়ানরা। অভিনেতা সায়ক চক্রবর্তী এবং অর্কজ্যোতি পাল চৌধুরী জানালেন তাঁদের মতামত।
সায়ক চক্রবর্তী--
সমস্ত রকম প্রিকশন নিয়েই আমাদের শুটিং শুরু হবে। এত গুলো দিন আমরা সকলেই ভয়ঙ্কর একটা ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছি, আগামী দিনে আমাদের আরও অনেক বেশি সচেতনতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। আমার মতে এই সময়টা একে অপরের সঙ্গে একটা মানবিক বোঝাপড়া করে এগিয়ে চলার সময়। একটা বিরাট অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলেছে গোটা বিশ্ব। প্রতিটা মানুষই চিন্তিত তাঁর নিজ নিজ আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে। তিন মাস কোনও রোজগার নেই, সাধারণ মানুষের কাছে কতটাই বা জমানো টাকা থাকে? আমরা যাঁরা কাজ প্রতি ডেইলি রোজগারের ভিত্তিতে উপার্জন করি তাঁদের বাড়িভাড়া, ই এম আই, ইলেক্ট্রিসিটি বিল, প্রতিদিনের খাওয়াদাওয়া, হাত খরচা, এই সব তো রয়েছেই, তার ওপর যে সব অভিনেতা অভিনেত্রী এবং টেকনিশিয়ানদের পরিবারে কেবল তিনিই একা রোজগেরে তাঁদের তো সত্যি বলতে দিশাহীন পরিস্থিতি! আবার অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে এই আর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন প্রোডিউসাররাও। চ্যানেলেও কোনও কাজ হয়নি। যদি প্রোডিউসাররাই না বাঁচেন, চ্যানেল না চলে, তাহলে আমরাই বা কেমন করে বাঁচব! এই সময় তো সাইড ইনকামেরও কোনও উপায় নেই! শুধু ফিল্ম নয়, সব ইন্ডাস্ট্রির এক অবস্থা। আমার মতে ঠাণ্ডা মাথায় যতদিন না সব কিছু আগের মতো স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন একটু কোয়াপারেট করে চলার মানসিকতা রেখে এগিয়ে যেতে হবে সবাইকে। কারণ পরিস্থিতি কিন্তু আগের মতো নেই। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।
লকডাউনের আগে আমার জি-বাংলায় ‘রানী রাসমণি’এবং স্টার জলসায় ‘কপালকুণ্ডলা’-র কাজ চলছিল। লকডাউনের পর জি-বাংলায় ‘কাদম্বিনী’-র শুটিং শুরু হওয়ার কথা। ১০ তারিখ থেকেই ফ্লোরে ফিরতে পারবে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি। অনেক ঝড়ঝাপটা গেল, কিন্তু আগামী দিনের লড়াইটা আরও বেশি কঠিন।
অর্কজ্যোতি পাল চৌধুরী--
সান বাংলায় ‘বেদের মেয়ের জোৎস্না ’-র শুটিং চলতে চলতে লকডাউন শুরু। এতদিন পর আবার কাজে ফিরব এটা ভেবেই ভালো লাগছে। এখনও পর্যন্ত যে ক'টা মিটিং হয়েছে তা খুবই পজিটিভ। সব কিছু পজিটিভ ভাবেই এগোচ্ছে। ১০ তারিখ থেকে ফ্লোরে ফিরতে পারব এটা শোনার পর থেকেই আনন্দ হচ্ছে। তবে লকডাউন উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে মানেই যে আমরা বিপদ মুক্ত এমন তো নয়, সতর্কতা মূলক সমস্ত নিয়ম এবং বিধিনিষেধ মেনেই প্রত্যেকটা আর্টিস্ট, টেকনিশিয়ান, ডিরেক্টরিয়াল ডিপার্টমেন্ট সবাইকে কাজ করতে হবে। মে-মাসের শেষের দিকেই খবর পাচ্ছিলাম জুনের মাঝামাঝি থেকে শুটিং শুরু হতে পারে। তবে শুটিং হবে সব রকম সতর্কতা এবং কিছু নিয়ম অবলম্বন করে। তখন শুনেছিলাম, যতক্ষন না সেই নিয়ম গুলো পোক্তা হচ্ছে যেমন, কীভাবে কাজ হবে, বাজেট কী হবে, কোন জোন গুলোতে আমরা কাজ করতে পারব, সতর্কতার ক্ষেত্রে কী কী অবলম্বন করতে হবে, কত জন আর্টিস্ট এবং টেকনিশিয়ান একসঙ্গে শুটিং করতে পারবেন, শুটিংয়ের সময় ভাগ করা, ইত্যাদি, এই সব রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস তৈরি হয়ে গেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
আপাতত শুটিং করার ক্ষেত্রে কিছু সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন কিছু নিয়ম। সেই সব মেনেই কাজ শুরু হবে।
সারা বিশ্ব একটা স্পর্শকাতর সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় তো মনে হয়েছিল আর হয়তো স্বাভাবিক হবে না কোনও কিছু! সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার একটা সুস্থ পৃথিবীতে ফেরার যে লড়াই সেটা কিন্তু আমাদের সকলের। আপাতত কিছুদিন সময়ের সঙ্গে সমঝোতা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কারণ যে অর্থিক মন্দা চলছে তা ঠিক হতে বেশ কিছুটা সময় তো লাগবেই।