বহু সিনেপ্রেমীর কাছেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের পথচলার শুরুটা বেশ খানিকটা অস্পষ্ট। ভারতীয় সিনেমার জনক হিসাবে আমরা জানি দাদা সাহেব ফালকের নাম। তবে বাঙালিদেরও কী জানা আছে দাদা সাহেবেরও বহু আগে এই কলকাতা শহরে বসে একজন ছবি পাগল মানুষ তৈরি করেছিলেন ‘আলিবাবা..’ যাঁর হাত ধরে ভারতীয় সিনেমার পথ চলা শুরু, এবার তাঁকে নিয়ে পর্দায় গল্প বুনেছেন পরিচালক অরুণ রায়। তাঁর হাত ধরে ভারতীয় সিনেমার গুটি গুটি পায়ে হাঁটা শুরু। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল ‘হীরালাল’-এর ট্রেলার, লঞ্চ ইভেন্টে শামিল হয়েছিলেন তারকারা।
পরিচালক অরুণ রায়ের কথায়, মানুষের ভুল ভাঙাতে এই সিনেমা বানিয়েছেন। দাদা সাহেব ফালকে ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ বানিয়েছিলেন ১৯১৩ সালে। কিন্তু তাঁর বছর দশেক আগে ১৯০১-১৯০২ সালে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়ে ফেলেছিলেন হীরালাল সেন। তিনি মনে করেন বাঙালির এবিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত।
পরিচালক আরও বলেন, প্রথম বিজ্ঞাপন বিষয়ক ছবি, ডকুমেন্টরি সবই সবই হীরালাল সেনের হাত ধরে পথ চলা শুরু। সিনেমার ব্যবসা থেকে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা সবই ওঁনার হাতে। অথচ ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ব্রাত্যই রয়ে গিয়েছেন হীরালাল সেন।
ছবিতে হীরালাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে কিঞ্জল নন্দ-কে। এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, অনুষ্কা চক্রবর্তী, অর্ণ মুখোপাধ্যায়রা। ছবির গল্প ও চিত্রনাট্যকার পরিচালক অরুণ রায় নিজেই। ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ময়ূখ-মৈনাক।
পর্দার হীরালাল অর্থাত্ অভিনেতা কিঞ্জল নন্দ জানিয়েছেন, ‘এমন একটা প্রয়োজনীয় ছবির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে ভীষণ আপ্লুত। হীরালাল সেন ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের ভুলে যাওয়া এই তারকা প্রথম চলচ্চিত্র কে বিনোদন ও তথ্য সম্প্রচারের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। আমি ছবিতে তার বৈপ্লবিক চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি নিশ্চিত ছবির মধ্যে দর্শক সেই পরিশ্রম দেখতে পাবেন’।
১৮৬৬ সালে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ হীরালাল সেনের। অত্যন্ত ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন। স্থিরচিত্র তোলার প্রতি ছিল বিশেষ আগ্রহ। ১৮৯৮ সালের গোড়ায় কলকাতা স্টার থিয়েটারে গিয়ে চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়েন। চলচ্চিত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহের দরুন ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করেন ক্যামেরা। তাঁর ভাই মতিলাল সেন খোলেন 'রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি' প্রযোজনা সংস্থা। হীরালাল সেন ছিলেন শিল্পী মানুষ। যাঁর জেরে ডকুমেন্টারি, বিজ্ঞাপনের ছবি, থিয়েটারের দৃশ্য চলচ্চিত্রায়িত করে সংস্থাকে অন্য মাত্রায় তুলে ধরেন।
কিন্তু শিল্পী মানুষের ব্যবসায়িক বুদ্ধির অভাবে ১৯১৩ সালে কোম্পানি লাটে ওঠে। মৃত্যুর কিছুদিন আগেই তাঁর ওয়্যার হাউসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের জেরে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁর সারা জীবনের কাজ। ১৯১৭ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় হীরালাল সেনের। সেখানেই শেষ হয় এক স্বর্ণময় অধ্যায়ের। এরপর কেটে গিয়েছে একশো বছরেরও বেশি সময়, উপেক্ষিত নায়কের কাহিনি এবার পর্দায় আসছে।
ইন্দ্রজিৎ রায়ের প্রযোজনা সংস্থা ইজেল মুভিজের ব্যানারে ও আত্রেয়ি নির্মাণের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে 'হীরালাল'। আগামী ৫ ই মার্চ মুক্তি পাবে এই ছবি।