৩১ দিন ধরে শুধু হোটেল আর মাঠ। নাভিঃশ্বাস ছুটছিল সৌরভের। সাতপাঁচ না ভেঙে বেরিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানের রাস্তায়। ঠিক যেমনভাবে এমএস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরিতে ধোনিকে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। তবে ভেস্তে যায় সৌরভের প্ল্যান! মাঝরাতে খাদ্যরসিক সৌরভের অ্যাডভেঞ্চারে ঘুম উড়েছিল তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের। সেই গল্পই এবার দাদাগিরির মঞ্চে শোনালেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
২০০৪ সালে দাদার নেতৃত্বে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল ভারতীয় দল। ১৫ বছর পর প্রথমবার পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখেছিল টিম ইন্ডিয়া। আটসাঁট নিরাপত্তায় মোড়া সেই সফরে ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিসদের ভয়ঙ্কর ইন-কাটারের চেয়েও বেশি কঠিন ছিল নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনিতে আটকে রাখা। সম্প্রতি দাদাগিরি মঞ্চে পৌঁছেছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্যের কন্যা, অভিনেত্রী লহমা ভট্টাচার্য।
তাঁর সঙ্গে গল্প করার ফাঁকেই সৌরভ জানান, ‘এত সিকিউরিটি জীবনে কখনও দেখিনি। চারিপাশে শুধু বন্দুক। আমরা যে হোটেলে থাকতাম, তার নীচের ও উপরের ফ্লোরে কেউ থাকতে পারত না। সেগুলো ফাঁকা করা হয়েছিল নিরাপত্তার কারণে। রুম সার্ভিসে যে খাবার আসত, সেগুলো বাইরে সিকিউরিটি প্লেটে তুলে চেখে দেখত তারপর আমাদের খেতে দেওয়া হত। এইসব দেখে আমি বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম।’
মহারাজ যোগ করেন, ‘হোটেল, মাঠ, চাপ-আর পারছিলাম না। একদিন কলকাতার যে বন্ধুরা ছিল আমি তাদের সঙ্গে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম, তোমার বাবাও ছিলেন..কোনওরকম সিকিউরিটি ছাড়া। ভারত তখন ১৫ বছর বাদে পাকিস্তানে গিয়েছে। পিছনের রাস্তা দিয়ে পাকিস্তানের ফুড স্ট্রিটে গিয়েছিলাম। একটা টুপি আর সন্ধ্যেবেলা একটা সানগ্লাস, যাতে মুখটা খানিক ঢাকা যায়। আর পাকিস্তানের ফুড স্ট্রিট তো বিখ্যাত তন্দুরি খাবারের জন্য। খাওয়া প্রায় শেষের পথে, ফিরনি অর্ডার করেছি। দেখছি উলটো দিক থেকে ওখানে আরেক স্বনামধন্য সাংবাদিক রাজদীপ সারদেশাই আসছেন।’
টুপি-সানগ্লাসে রাজদীপ সরদেশাইয়ের চোখে ধুলো দিতে পারেননি সৌরভ। তাঁকে সহজেই চিনে ফেলেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক। ফুড স্ট্রিটে বসা সৌরভ তখন খাওয়া ছেড়ে তড়িঘড়ি হোটেলে ফেরেন। এক নিঃশ্বাসে সঞ্চালক বলে চলেন, ‘আমার এখনও মনে আছে ওইদিন রাতেই পারভেজ মোশারফের ফোন। উনি বললেন, এটা যেন দ্বিতীয়বার না হয়। কারণ কিছু হলে উনি ভারতকে জবাব দিতে পারবেন না। ওইবারের পাকিস্তান সফরটা দুর্দান্ত ছিল’। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রয়াত হন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফ। ক্রিকেটের বিশেষ ভক্ত ছিলেন তিনি।