সদ্য শেষ হয়েছে সারেগামাপা-২০২৩। তাতে যুগ্মভাবে বিজেতার মুকুট পেয়েছেন পদ্মপলাশ হালদার ও অস্মিতা কর। তবে বিতর্ক শুরু হয়েছে পদ্মপলাশের জয় নিয়ে। পদ্মপলাশের জয় নিয়ে উঠেছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। অনেকেরই অভিযোগ পদ্মপলাশ ‘গুরুজি অজয় চক্রবর্তীর ছাত্র, সেকারণেই ওকে সেরা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।' প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, 'শুধুমাত্র কীর্তন, লোকগান গেয়ে কেউ কীভাবে জয়ী হতে পারে?’ এর আগে অবশ্য ২০২১-এ সারেগামাপা-র খেতাব জয়ী অর্কদীপের জয় নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল, কারণ তিনিও ছিলেন মূলত লোকসঙ্গীত শিল্পী।
পদ্মপলাশের জয় নিয়ে চলা বিতর্কে এবার মুখ খুললেন সারেগামাপা-র লোকগানের প্রশিক্ষক, গবেষক দেব চৌধুরী। এক সংবাদমাধ্যমকে দেব চৌধুরী জানান, তিনি মেন্টর থাকাকালীনই গতবার জয়ী হয়েছিলেন অর্কদীপ মিশ্র, তখনও বিতর্ক হয়েছিল, এবার পদ্মপলাশের ক্ষেত্রেও বিতর্ক হচ্ছে। তাঁর কথায়, আসলে আমরা মুখেই যত বাঙালিয়ানার বড়াই করি, আসলে আমরা নিজের সংস্কৃতি নিয়ে উদাসীন। গতবার অর্কদীপ যেমন লোকগান ছাড়াও অন্যধরনের কিছুগান ভালো গেয়েছিলেন, পদ্মপলাশও তাই। অস্মিতাও কিন্তু ফেসঅফ রাউন্ডে লোকগান গেয়েই প্রতিযোগিতায় ফিরে এসেছিলেন।
পদ্মপলাশকে নিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে দেব চৌধুরী বলেন, সারেগামাপা-র মঞ্চে যাঁরা গুরু, মহাগুরু, বিচারক রয়েছেন, তাঁরা অনেক বড় মাপের মানুষ। তাঁদের ক্ষেত্রে এইরকম অভিযোগ ভীষণভাবেই ভুল, এই অভিযোগের অর্থ গোটা সংস্কৃতির অপমান ও অসম্মান।
দেব চৌধুরী জানান, ২০১৯-এ একবার উত্তর ২৪পরগনার একটা স্টেশনে শেষ ট্রেন ধরে যাওয়ার সময় কীর্তনের আসর তাঁর মন কেড়েছিল। তিনি সেখানে পৌঁছে গিয়ে দেখেছিলেন রাধামাধবের মন্দিরে একটি ছেলে পদাবলী কার্তনের সঙ্গে নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, শ্যামাসঙ্গীত, এমনকি মান্না-দের গান মিশিয়ে গাইছেন। কী অপূর্ব সেই গান, সেই ছেলেটিই আজকের জয়ী পদ্মপলাশ হালদার।
২০১৭ সালে কালীকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের দুর্ঘটনায় আকষ্মিক মৃত্যুর পর সারেগামাপা-তে লোকগানের মেন্টরের দায়িত্ব নিয়েছেন দেব চৌধুরী। তাই সেটা তাঁর কাছে কতটা চ্যালেঞ্জিং? এ প্রশ্নে দেব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রতিটি সৃজনশীল মানুষই আগের থেকে আরও বেশি ভালো কিছু করতে চান। তিনিও তাই। তাঁর কথায়, শিল্পীদের পুনর্জন্ম হয়। বাউল সম্রাট পূর্ণচন্দ্র দাস, পবনদাস বাউল, গৌড়ক্ষেপা সারা পৃথিবীকে বাউল সঙ্গীতের ধারাকে চিনিয়েছেন। এর পাশাপাশি কালিকাপ্রসাদ ওঁপ গবেষণালব্ধ মাটির ছোঁয়া রেখে সমকালীন পরিবেশনায়, সারেগামাপা-র মঞ্চে হাত ধরে সমস্ত বাঙালির কাছে লোকগানকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। যাতে বেশ ভালো সাড়া পড়ে গিয়েছিল। আমিও এখন আমার মতো করে এই মঞ্চের মাধ্যমে লোকগানকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আর এই স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য রথীজিৎ ভট্টাচার্য ও পরিচালক অভিজিৎ সেনকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি দেব চৌধুরী।