এক চিত্রনায়িকাকে ফোনে ধর্ষণের হুমকি এবং তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারানো ডা. মুরাদ হাসান নির্বিঘ্নে দেশ ছেড়েছেন৷
সরকার বলছে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা না থাকায় দেশের বাইরে যেতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু আইনজীবীরা বলছেন, সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে যেতে প্রশাসনিকভাবে বাধা দিতে পারতে।
ডা. মুরাদ হাসানের অডিও প্রকাশ হওয়ার পর তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসান গত ৭ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তবে তিনি মাঝেমধ্যে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত একটার পর তিনি এমিরেটস-এর একটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।
মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলেও এখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা হয়নি। ঢাকার শাহবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলার আবেদন করলেও তা এখনও রেকর্ড করা হয়নি। অন্যদিকে বিএনপি মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সারা দেশে মামলা করার ঘোষণা দিলেও এখনও বিএনপি কোনও মামলা করেনি। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, 'আমরা মামলার জন্য আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি। তারা মতামত দিলেই মামলা করব।' তবে ডা. মুরাদ দেশ ছাড়ায় শুধু সরকারকেই দুষছেন তিনি, 'সরকার একজন অপরাধীকে দেশের বাইরে যেতে সহায়তা করেছে। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে অনৈতিকতা, অশ্লীলতা ও বিকৃত রুচির মানসিকতার অভিযোগ আছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের আবেদন আছে। তাই সরকার তাঁকে বিদেশ যেতে দিয়ে অপরাধীর পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। আর এখানে স্বজনপ্রীতিও স্পষ্ট।'
তবে আওয়ামী লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, 'আমার জানা মতে, তাঁর বিরুদ্ধে তো কোনও মামলা নেই। কোনও ওয়ারেন্ট বা বিধিনিষেধ নেই। সেক্ষেত্রে তো তিনি দেশের বাইরে যেতে পারেন। তিনি তো আগেও দেশের বাইরে ছিলেন।' তাঁর বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ আছে, সেই অভিযোগের কারণে তাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে, সরকার চাইলে কি তার বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারত? এর জবাবে আওয়ামী লিগের এই নেতা বলেন, 'তাঁর আপত্তিকর কথাবার্তার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এমন তো অভিযোগ নেই যে সে রাষ্ট্রের কোনও ক্ষতি করে বা রাষ্ট্রের কোনো সম্পদ বা অর্থ আত্মসাৎ করে পালাচ্ছে। তাঁর চারিত্রিক অবক্ষয় ছিল, তাঁর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।' তিনি জানান, এরইমধ্যে জেলা আওয়ামী লিগ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লিগের পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘এখানে দুটি দিক আছে। যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই এবং বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই তাঁকে পুলিশ দেশের বাইরে যেতে দিয়েছে। যদি নিষেধাজ্ঞা থাকত, তাহলে তো যেতে দিতে না। বিমানবন্দরে তথ্য থাকতে, আটকে দেওয়া হত। নিষেধাজ্ঞা যে নেই তিনি সেটা জেনেই বিমানবন্দরে গিয়েছেন। এটা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন।' তাঁর কথায়, 'সংবিধানে নাগরিকদের মুক্ত চলাফেরার অধিকার দেয়া আছে। কিন্তু যেহেতু তিনি ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন, বর্ণবাদী কথা বলেছেন, তাই সরকার চাইলে তাঁর বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা করতে পারত। আর দুর্নীতির মামলা হলে জামিনে থাকলেও বিদেশে যেতে আদালতের অনুমতি লাগতে।’ তিনি বলেন, 'সরকার এক্ষেত্রে বাধা দেয়নি। কিন্তু যদি বিরোধী রাজনীতির কেউ হতেন, তাহলে হয়ত সরকার তার গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে বিমানবন্দরে তথ্য দিয়ে রাখত। বিদেশে যেতে পারতেন না।'
নারী নেত্রী এবং মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, 'মামলা হোক বা না হোক সরকারের দায়িত্ব হল, এই ধরনের ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা, গ্রেফতার করা। সেটা না করে তাঁকে বিদেশে যেতে দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল, এখন তিনি যেখানেই থাকুন না কেন সেখান থেকে নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করা।' তাঁর কথা, 'এই ধরনের জঘন্য কাজ যাঁরা করেন, নারীকে অবমাননা করেন, ধর্ষণের হুমকি দেন, তাদের রাষ্ট্রেরই উচিত আইনের আওতায় আনা।'
আওয়ামী লিগের সূত্র জানায়, মুরাদ হাসানকে যে জেলা আওয়ামী লিগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদনের পর কার্যকর হবে। মন্ত্রিত্ব গেলেও তিনি এখনও সংসদ সদস্য আছেন। সেটা থাকবেন কিনা, তা আরও পরের বিষয়। কারণ, দল চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের পর সেই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। সংবিধানে বলা হয়েছে, কোনও সংসদ সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করলে বা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে। বহিষ্কার করা হলে কী হবে, তা সংবিধানে বলা নেই। ফলে সংসদে তাঁর সদস্যপদ থাকবে কি থাকবে না, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আর আদালতে যদি নৈতিক স্খলন প্রমাণিত হয়, তাহলে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)