গোয়ার একটি গ্রামে রাশিয়ান শিল্পীরা রাশিয়ান ভাষায় শনি এবং রাজা বিক্রমাদিত্যর গল্প তুলে ধরছিলেন একটি নাটকের মাধ্যমে। কিন্তু সেটাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু আচমকা নাটকটিকে থামানো হল কেন? কী এমন হল হঠাৎ? আসলে সেই গ্রামবাসীরা ভেবেছিলেন মঞ্চে বুঝি ওঁরা নাটকের বদলে কালো জাদু করছেন! বুঝুন ঠ্যালা! নাটক দেখে কিনা শেষে মনে হল কালো জাদু!
উত্তর গোয়ার পালিম পার্নেমে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যরা হই হট্টগোল করে এই নাটকটিকে মাঝপথে থামিয়ে দেন বলেই অভিযোগ করা হয়। শুধু তাই নয়। এমন কিছু কী করে তাঁরা মঞ্চে দেখাচ্ছেন সেই বিষয়ে প্রশ্ন করেন তাঁরা শিল্পীদের। তাঁরা অনুমতি পত্র দেখতে চান। এই নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য তাঁদের কাছে যে অনুমতি আছে সেটার কাগজ গ্রামবাসীরা দেখতে চান বলেই অভিযোগ করা হয়।
ওলগা কামিইয়েন্সকা একজন রাশিয়ান নাট্যকার এবং নিকোলা ভ্রানিক, একজন বেলারুশিয়ান নাগরিক তথা এই নাটকের মুখ্য অভিনেতা সহ আরও অনেকে মিলে রাশিয়ান ভাষায় একটি খোলা জায়গায় এই নাটক মঞ্চস্থ করছিলেন গ্রামের মধ্যে। তখনই তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। শিল্পীরা জানান যে তাঁরা আগেই স্থানীয় পঞ্চায়েতে এই নাটকের বিষয় জানিয়েছিলেন। তা সত্বেও নাটকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
কামিইয়েন্সকা বলেন, 'আমরা আগে থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েতে জানিয়ে রেখেছিলাম আমাদের নাটকের কথা। সবাই এই নাটক বিনামূল্যে দেখতে পেত। কিন্তু আমাদের নাটক চলাকালীন একটা গুজব ছড়ায় যে আমার নাটকের বদলে নাকি কালো জাদু করছি। আমরা সেটা বোঝাতে চাই ওঁদের। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস করাতে চাই যে আমরা কোনও রকম অন্ধবিশ্বাস মানি না। বা কোনও ধর্মীয় সংগঠনের সদস্য নই। আমরা কেবলই শিল্পী।'
কিন্তু গ্রামবাসীদের থেকে এমন প্রতিক্রিয়া পাওয়ায় তাঁরা ভীষণই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। কামিইয়েন্সকা বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, 'আমাদের মন ভেঙে গেছে। আমরা আমাদের সবটা দিয়ে এই ভয়টাই গল্পটিকে নাটকের আকারে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। আমরা কেবলই শিল্পী যাঁরা ভারতকে ভালোবাসি। এই দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির গুণমুগ্ধ আমরা। আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে ভারতের নানা গল্প, ইতিহাস সম্পর্কে আমরা জানতে পারি, আর নিজেদের শিল্পের মাধ্যমে সেটা সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি।'
একদিকে যখন শিল্পীরা তাঁদের নাটক থামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ করেন তখন আরেকদিকে গ্রামের এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, ' নাটক দেখে ভেবেছিলাম ওঁরা বুঝি কালো জাদু করছে। তাই ওঁদের কাছে অনুমতি আছে কিনা সেটা জানতে চাওয়া হয়েছিল। কালো পোশাক পরে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে, ড্রামের তালে তালে নাচছিলেন ওঁরা। আর গ্রামে কিছু করতে চাইলে তো পঞ্চায়েতের থেকে অনুমতি নিতে হবে।'
এই বিষয়ে পুলিশের কাছেও অভিযোগ যায়। পুলিশ তদন্ত করে দেখে যে কালো জাদুর অভিযোগটা সর্বৈব মিথ্যা। এমনটাই উত্তর গোয়ার এসপি জানিয়েছেন।