নেটিজেনদের কাছে এখন তিনি 'ইন্ডিয়ান থর'। হাতোড়া ত্যাগী শিহরণ জাগাচ্ছেন দর্শক মনে। স্ত্রী' ছবিতে জনা হিসাবে নজরে এসেছিলেন ঠিকই, তবে পাতাল লোক পাল্টে দিল অভিষেকের কেরিয়ার গ্রাফ।
গত কয়েক দিনে জীবনটা পুরোদস্তুর পাল্টে গিয়েছে এই প্রবাসী বাঙালির।নেট নাগরিকদের কাছে এখন নয়া সেনসেশন হাতোড়া ত্যাগী। কথা হচ্ছে অভিনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দেখতে দেখতে মুম্বইয়ে ১৪ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন অভিষেক। তবে আমাজন প্রাইমের পাতাল লোকের সৌজন্যে আজ লোকের মুখে মুখে ফিরছে তাঁর নাম। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিনিধি জ্যোতি শর্মা বাওয়ার সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ধরা দিলেন অভিষেক।
পাতাল লোক জীবনটা পাল্টে দিল?
এক্কেবারে। গত কয়েকদিনটা স্বপ্নের মতো কাটছে। হয়ত একজন স্পোর্টসম্যান কোনও সিরিজ জিতলে বোধহয় এমনই অনুভুতি পেয়ে থাকেন। ১০ দিনে জীবনটা পাল্টে গিয়েছে।
হাতোড়া ত্যাগীর চরিত্রের জন্য তো প্রশংসায় ভাসছেন, পরিবার কী বলছে?
লোকজন এখন আমাকে ইন্ডিয়ান থর বলছে। অনেক মিম দেখছি সেই নিয়ে। দারুণ লাগছে।আমি নিজে থরের ভীষণ ভক্ত। তাই অসাধারণ অনুভূতি। আমার মা বলছে তিনি পাতাল লোক দেখতে চান না, স্ত্রীও একই কথা বলছেন।ত্যাগীজিকে দেখত এতটুকুও ইচ্ছুক নয় আমার জীবনের দুইজন নারী! ভেবে দেখুন তাহলে।
স্ত্রী'র জনা থেকে হাতোড়া ত্যাগী-এই জার্নিটা নিয়ে কী বলবে?
জনার জীবন অনেক প্রোটেক্টেড ছিল, আর এখানে (পাতাল লোক) পুরো উল্টো-হাতোড়া ত্যাগী একজন রিজেক্টেট মানুষ। আমি তো ভাবতেও পারছি না কেরিয়ারের এই সময় দাঁড়িয়ে এই ধরণের একটা চরিত্রে আমি অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমি সৌভাগ্যবান যে প্রযোজক-পরিচালকরা আমাকে এই চরিত্রটার যোগ্য ভেবেছে। স্ত্রীর পর আমার তিনটে ছবিতে আমি কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেছি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হাতোড়া ত্যাগী একদম আলাদা। বিশাল হাতোড়া ত্যাগী আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।
গোটা সিরিজে চার-পাঁচটি ডায়লগ রয়েছে।তাও দু তিনটি শব্দের। গোটা লাইন ছিল না একটাও। পারফরম্যান্সটা পুরোটাই অভিব্যক্তি দিয়ে ফুটে তুলতে হয়েছে। আপনাদের একটা কথা জানিয়ে রাখি। আমি নিজে এখনও পাতাল লোক দেখেনি। আমি দেখতেও চাই না, কারণ আমি নিজে নিজের সবচেয়ে বড় সমালোচক। তাই আগে সবার থেকে শুনেনি আমি কী করছি,তারপর দেখব।
বিশাল ত্যাগী, অভিষেকের চোখে কে- দোষী নাকি পরিস্থিতির শিকার?
আমি ওকে ভিক্টিম হিসাবেই দেখেছি, সবসময় সেভাবেই দেখব। আমার মনে হয় কোন দুনিয়া থেকে ও উঠে এসেছে,সমাজ যেভাবে ওকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে সেটা ভেবে দেখাটা জরুরি।ওর বোনেদের সঙ্গে যা ঘটেছে-আজ আমাদের সমাজে কত মেয়ের সঙ্গেই তো সেটা ঘটছে। আমরাও তো সেগুলো পড়ে কতকিছু ভেবেনি,কিন্তু আমাদের হাতপা বাঁধা। ও তো আসলে ওর বোনেদের বদলা নিচ্ছিল। সেই জমা হওয়া ক্ষোভটাই ওই খুনের দৃশ্যে ফুটে উঠেছে। আসলে সমাজটাই দায়ী। সমাজই বিশালকে হাতোড়া ত্যাগী বানিয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সত্যি তো কত মানুষের উপরই অত্যাচার করা হচ্ছে। সত্যি বলতে আমার চোখে কিন্তু হাতোড়া হিরো, ভিলেন নয়।
বাস্তব জীবনে অভিষেকও কী সারমেয়প্রেমী?
অবশ্যই। হাতোড়ার মতো আমিও ভীষণ জড়িত চারপেয়ে প্রাণীদের সঙ্গে। আমার বাড়িতে কুকুর নেই তবে বিড়াল রয়েছে। গোয়া থেকে আমি ওকে নিয়ে এসেছিলাম। প্রতিদিন আমি রাতে আমার এলাকার সারময়েদের খাবার খেতে দিতে বেরোই। ওদের সঙ্গে কথা বলি।ওদের ভাষা না বুঝলেও ওদের সঙ্গে একটা আত্মিক যোগ রয়েছে। সেটা বলে বোঝানো খুব মুশকিল।
পাতাল লোকের সিক্যুয়েল আসছে?
হ্যাঁ, তেমনই কথাবার্তা চলছে। এখন চিত্রনাট্য তৈরি হচ্ছে বলা যেতে পারে। আমি নিজেও খুব এক্সাইটেড,দেখতে চাই এখান থেকে গল্প কীভাবে এগিয়ে যাবে।
পাতাল লোকের কাস্টিংয়ের দায়িত্ব তো তুমি সামলেছো, কতটা সহজ বা কঠিন ছিল সেই দায়িত্বটা?
আমি আর অনমোল একটা কম্পানি চালাই, আমরা পাতাল লোকের কাস্টিং করেছি। প্রধান চরিত্রগুলো বেছে নেওয়া তো একদমই সহজ ছিল। এছাড়াও বিপিন শর্মা,অনুরাগ অরোরা,আকাশ খুরানা,মণীশ চৌধুরী-এদের নাম তো মাথাতে ছিলই। শুধু এদের অন বোর্ড নিতে হবে এটা ভেবে নিয়েছিলাম। অনমোল একাধিক শহরে গিয়ে চরিত্রগুলো খুঁজে বার করেছে,যেমন মণিপালে গিয়ে রোলান্ডো সিংকে খুঁজে বার করেছে, যে ম্যারি লিংডোহ বা চিনির চরিত্র করেছে, পঞ্জাবে গিয়ে জগজিত সান্ধুকে বেছে নিয়েছে।
ছবিতে তোমাকে কমিক রোলেই দর্শক দেখেছে, সে জায়গায় ওয়েব স্পেসে তোমাকে ডার্ক চরিত্রে আমরা দেখেছি-এটা কী খুব সর্তকভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত?
এটা প্ল্যান করে বা সর্তকভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। পপ্যুলারিটি বা ছবির সাফল্যের উপর অনেককিছু নির্ভর করে। আসলে আগে কী চরিত্রে অভিনয় করেছো সেটা হয়ত গুরুত্বপূর্ন। কমেডি জঁরে অভিনয় করে ছবিতে আমি প্রশংসা পেয়েছি, তাই হয়ত পরিচালকরা আমাকে ভেবেছি ওই চরিত্রগুলো আমি করতে পারব। আমি চেষ্টা করছি সেই ধারণা বদলে নতুন নতুন চরিত্রে অভিনয় করতে। আশা করছি সফল হব।
নতুন প্রজেক্ট কালি টু নিয়ে কিছু বলবে?
কালি টু নিয়ে আমি ভীষণ এক্সাইটেড কারণ এই প্রথমবার আমি বাংলা বলেছি। এই শোটা দ্বিভাষিক শো। হাতোড়া ত্যাগীর থেকে জিন লিয়াং একদম আলাদা। এটা একদম কাকতালীয় যেটা এখন দুটো শো পরপর মুক্তি পাচ্ছে। জিন লিয়াং ড্রাগ লর্ড,যে কথা বলতে ভীষণ ভালোবাসে। সে স্টোরি টেলার। সব মিলিয়ে খুব এক্সাইটেড কালি টু নিয়ে।
(ফ্যানেদের জন্য বাংলায় স্পেশ্যাল মেসেজ দিলেন অভিষেক)
আমি প্রথমবার বাংলা বলেছি। প্রথমবার বাংলায় অভিনয় করেছি। যদি বাংলা ভাষায় কোনও কমি (খামতি) থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন। শো'টা দেখে জানাবেন আমরা বাংলা ভাষা আপনাদের কেমন লাগল।
২৯ মে থেকে জিফাইভে স্ট্রিমিং শুরু হবে কালি টু'র। এছাড়াও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে অভিষেকের হেলমেট, আঁখ মিচোলি, এবং দোস্তানা টুয়ের মতো ছবি। তিনটি ছবি কমেডি জঁরের।
পাতাল লোক দিয়ে কেরিয়ারের একটা নয়া উচ্চতায় গেছেন অভিষেক। দর্শকরা মুখিয়ে ত্যাগীকে ফের স্ক্রিনে দেখার জন্য।