তিনি গানে গানে বলে গিয়ছেন, ‘মেরি আওয়াজ হি মেরি পয়চান হ্যায়’। সত্যি তো তাঁর কন্ঠই তাঁর একমাত্র পরিচয়, যে কন্ঠের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ থেকেছে আসমুদ্রহিমাচল। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাঁর কোটি কোটি অনুরাগী। আজ সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ‘নাইটেঙ্গল অফ ইন্ডিয়া’।
মরাঠি ছবির সঙ্গে প্লে-ব্যাক দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ লতা মঙ্গেশকরের। ১৯৪২ সালে একটি মারাঠি ছবির সৌজন্যে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। পরের বছর মরাঠি ছবি ‘গাজাভাউ’-এর জন্য ‘মাতা এক সুপুত কি দুনিয়া বদল দে তু’ গানটি রেকর্ড করেন লতা মঙ্গেশকর, এটি ছিল তাঁর প্রথম হিন্দি গান। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। বাদ যায়নি বাংলাও, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে তাঁর বাংলা গানের জগতে প্রবেশ।
১৯৫২ সালে হেমেন গুপ্ত তৈরি করেছিলেন হিন্দি ছবি- আনন্দমঠ। কিন্তু তাঁর কথায় লতা রাজি হননি ওই ছবিতে গান গাইতে। এরপর লতা মঙ্গেশকরকে রাজি করাতে হাজির হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। লতা তাঁকে দেখেই রাজি হয়ে গেলেন ‘বন্দেমাতরম’ গাইতে। ২১টি টেকের পর ওই আইকনিক গান রেকর্ড হল। বহুবার বিভিন্ন ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘বন্দেমাতরম’ গান, তবে লতা-হেমন্ত জুটির 'বন্দেমাতরম'কে টেক্কা দেবে এমন সাধ্যি কার! এরপর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই বাংলা গানের জগতে সফর শুরু করেন শিল্পী। ‘ প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’, এটাই লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ড করা প্রথম বাংলা গান।
সলিল চৌধুরী, রবীন চট্টোপাধ্যায়, সুধীন দাসগুপ্ত , এমনকি কিশোর কুমারের সুরেও গান গেয়েছেন লতা। প্রয়াত শিল্পীর রেকর্ড করা বাংলা গানের সংখ্যা ১৮৬টি। লতা মঙ্গেশকর তাঁর সাত দশক দীর্ঘ কেরিয়ারে এক হাজারেরও বেশি হিন্দি ছবির গান রেকর্ড করেছেন এবং গান গেয়েছেন ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষায়। নতুন শতাব্দীতে গানের জগত থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন লতা, তবুও ‘বীর জারা’, ‘রং দে বসান্তি’র মতো ছবির অ্যালবামের শোভা বাড়িয়েছে তাঁর সুমধুর কন্ঠ। ২০১৯ সালে ভারতীয় আর্মিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেন লতা, রেকর্ড করেন ‘তেরি মিট্টি কি সওগন্ধ’, এটিই লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ড করা শেষ গান।