সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার মামলার জট খুলতে নেমে বেশ কিছু সমস্যার মুখে মুম্বই পুলিশ। এই হাই-প্রোফাইল কেসে নিয়ে যথেষ্ট চাপে তদন্তকারী অফিসাররা। গত ১৪ জুন বান্দ্রার কার্টার রোডের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার হয় সুশান্ত সিং রাজপুতের দেহ। এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মৃত্যু নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এই ঘটনা নিয়ে প্রচুর ভুয়ো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টও ভাইরাল হয়েছে। শুরু থেকেই সুশান্ত ভক্তরা প্রশ্ন তুলেছিলেন সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে। বেশকিছু ভাইরাল ফেসবুকে পোস্টে বলা হয় ১৪ জুনের আগের রাত থেকেই নাকি বন্ধ ছিল সিসিটিভি (CCTV) ফুটেজ। এইসব কিছু নিয়ে এবার প্রকাশ্যে মুখ খুলল মুম্বই পুলিশ।
মঙ্গলবার মুম্বই পুলিশের ডেপুটি কমিশানার( জোন ৯) অভিষেক ত্রিমুখে সাংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানান, সুশান্ত সিং রাজপুত যে বিল্ডিংয়ে থাকতেন তার সিসিটিভি রেকর্ডিং হেফাজতে নিয়েছে মুম্বই পুলিশ। তবে অভিনেতার বাড়িতে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো নেই। আপতত ফরেনসিক রিপোর্টে অপেক্ষা করছে পুলিশ'।
ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন সুশান্ত তা আগেই জানিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টেও পাঁচ বিশেষজ্ঞের দল নিশ্চিত করেছেন ‘ঝুলে পড়বার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু’ হয়েছে সুশান্তের। তাই আত্মহত্যাই করেছেন অভিনেতা বলছে পুলিশ। আর সুশান্তের অবসাদের কারণ জানতে তাঁর ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী অফিসাররা। এই মামলায় সোমবার তলব করা হয়েছিল পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালিকে। রামলীলা,বাজিরাও মস্তানি-দুটো ছবিতেই সুশান্তই ছিলেন বনশালির প্রথম পছ্ন্দ,তবুও কেন সেই প্রজেক্টে কাজ করেননি সুশান্ত জানতে চায় পুলিশ। সোমবার দুপুরে প্রায় দু ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বনশালিকে। সূত্রের খবর এরপর পরিচালক শেখর কাপুরকেও ডেকে পাঠানো হবে বয়ান রেকর্ডের জন্য।
বলিউডের অন্দর মহলে সেই সময়ই শোনা গিয়েছিল, যশ রাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকবার কারণেই নাকি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বনশালির ছবিতে কাজ করতে পারেননি সুশান্ত।সেই সময় পানি ছবির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুশান্ত। শেখর কাপুরের এই স্বপ্নের প্রজেক্টের জন্য শুধু রামলীলা, বাজিরাও-মস্তানি নয়, ফিতুরের মতো ছবিও হাতছাড়া হয়েছিল সুশান্তের। তবে শেষ পর্যন্ত পানি থেকেই সরে দাঁড়ায় আদিত্য চোপড়ার যশ রাজ ফিল্মস।অভিমানে যশ রাজের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেন সুশান্ত। এই তথ্য গুলোই যাচাই করে দেখতে চায় পুলিশ।
এই মামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০ জনকে জেরা করেছে মুম্বই পুলিশ। পাশাপাশি কালিনা ফরেনসিক ল্যাবে সুশান্তের আত্মহত্যায় ব্যবহৃত পরনের কাপড়ের টেনসাইল টেস্ট বা প্রসারণ ক্ষমতার পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সুশান্তের দেহের ওজন ৮৫ কিলোর আশেপাশে,সেই ভার কি ধরে রাখতে সক্ষম ওই কাপড়ের টুকরো? বলবেন ফরেন্সিক এক্সপার্টরা। পাশাপাশি ওই কাপড় থেকে অভিনেতার গলায় পাওয়া দাগ হওয়া সম্ভব কিনা সেটাও পরীক্ষা করবেন কালিনা ল্যাবের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দল।
পুলিশ সূত্রে খবর, মূলত ফরেনসিক রিপোর্ট দশদিনের মধ্যেই জমা দিয়ে দেন বিশেষজ্ঞদের দল। তবে সুশান্তের সিং রাজপুতের মতো হাই প্রোফাইল মামলায় কোনওরকম দ্বিমতের বা সম্ভাবানার জায়গা রাখতে চায় না ফরেনসিক টিম,তাই অপেক্ষাকৃত বেশি সময় নিচ্ছেন তাঁরা। প্রতিটি বিষয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।