ঋষি কাপুর, বলিউডের এই মিষ্টি দেখতে হিরো কিন্তু বাস্তব জীবনে ছিলেন ভীষণ ঠোঁট কাটা। তাঁর টুইট ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কম হইচই হত না।ঋষির আত্মজীবনী ‘খুল্লম খুল্লা : ঋষি কাপুর আনসেন্সর্ড’-এর পাতাতেও চিন্টুজির এই বেপরোয়া এবং সাহসী দিকটাই কলমবন্দি হয়েছে। এই বইয়ের মুখবন্ধে রয়েছে ঋষি কাপুর পুত্র রণবীর কাপুরের একটি লেখা যেখানে বাবা-ছেলের জুটির ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং কাপুর খানদানের ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলেছেন রণবীর।
আজ ঋষি কাপুরের বয়স হওয়ার কথা ছিল ৬৮ বছর। যদিও চার মাসে আগে এপ্রিলের এক অভিশপ্ত সকাল কাপুর পরিবারের সদস্য তথা বলিউডের পর্দার অন্যতম আইকোনিক রোম্যান্টিক হিরো চিরকালের মতো কেড়ে নিয়েছে। আজ ঋষি কাপুরের জন্মদিনে আজ ফিরে দেখা বাবার জন্য রেখা রণবীরের সেই আবেগঘন চিঠি। যেখানে রণবীর লিখেছেন ঋষি কাপুরের কাছ থেকে পাওয়া জীবনের সবচেয়ে সেরা উপহার।
‘ আমি যখন আজ নিজের বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বিশ্লেষণ করতে বসেছি, তখন আমি কোনওরকম দ্বন্দ্ব ছাড়াই বলতে পারি যে আমাকে এবং আমার দিদি ঋদ্ধিমাকে সবচেয়ে দামি যে উপহারটা আমার বাবা আমাকে দিয়েছে সেটা হল আমাদের মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা। উনি আমাদের শিখিয়েছেন মা’ই হল আমাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের বাড়ির প্রাণ। মা সঙ্গে থাকলে আমারা জীবনের সব চড়াই-উতরাই অবলীলায় পার করে ফেলব'।
দ্বিতীয় উপহার? রণবীর লেখেন, ‘বাবা স্বামী হিসাবে অসাধারণ। যদিও মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হত এবং একে অপরের প্রতি রেগেও থাকতেন কিন্তু তাঁরা আজীবন একে অপরের সঙ্গে জুড়ে থেকেছেন এবং মাকে সম্মান করেছেন। ওঁনাদের দাম্পত্য জীবনটা সকলের জন্য একটা উদাহরণ, বিশেষত তাঁদের সন্তানদের কাছে’।
শুধু ব্যক্তিগতভাবেই নয়, পেশাদার জগতেও বাবাই রণবীরের আদর্শ। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় পাঁচ দশক কাটিয়ে ফেলবার পরেও অভিনয়ের প্রতি যে নিষ্ঠা ঋষি কাপুর দেখাতেন তা যে কোনও নবাগতর কাছে উদাহরণ।
বাবার সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরে কেমন সম্পর্ক ছিল রণবীর কাপুরের? ‘সঞ্জু’ তারকা বলেন, আমার মনে হয় বাবা আমার সঙ্গে নিজের সম্পর্কটা ঠিক তেমনভাবেই গড়ে তুলেছিল যেমনটা ঠাকুরদা এবং ওঁনার ছিল। এটা সত্যি এই সম্পর্কে একটা নির্দিষ্ট সীমা আমরা দুজনেই কোনওদিন পার করিনি। কিন্তু তার মানে এই নয়, আমাদের সম্পর্কে কোনও ফাঁক ছিল'।
রণবীরের মতে বাইরে থেকে প্রতিবাদী এবং সববিষয় নিয়ে খুব মুখর হলেও ভিতর থেকে চাপা স্বভাবের ছিলেন ঋষি কাপুর, এবং কাউকেই নিজের আসল আবেগগুলো দেখাতেন না।
অভিনেতা হিসাবে কেউই ঋষি কাপুরের সমকক্ষ হতে পারবেন না বলে বিশ্বাস রণবীরের। তিনি বাবার প্রশংসা করে সেই চিঠিতে লেখেন, ‘কেরিয়ারের দ্বিতীয় পর্বে অগ্নিপথ, দো দুনি চার, কাপুর অ্যান্ড সনসের মতো ছবির সঙ্গে বাবা আগের থেকেও বেশি প্রশংসা এবং পুরস্কার ঝুলিতে পুরছে- যা সত্যিই অভাবনীয়। শোবিজ দুনিয়ায় ৪৪ বছর টিকে থাকতে গেলে তোমার মধ্যে স্পেশ্যাল কিছু থাকতেই হবে'।
৩০ এপ্রিল ২০২০ ক্যানসার যুদ্ধে হেরে প্রয়াত হন ঋষি কাপুর। আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে কাপুর পরিবার জানায়, ‘ঋষি কাপুর চেয়েছেন মানুষ তাঁকে চোখের জলে নয় হাসি মুখে মনে রাখুক’।