শনিবার রেড রোডের পুজো কার্নিভালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়ার বড় অংশের তোপের মুখে অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সেদিন শহরের এক নামী ক্লাবের প্রতিনিধি হিসাবে রেড রোডে পৌঁছেছিলেন স্বস্তিকা। মঞ্চে উঠে মমতার পা ছুঁয়ে আর্শীবাদ নেন অভিনেত্রী, পালটা স্বস্তিকাকে মিষ্টি মুখ করাতে চকোলেট হাতে গুঁজে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ‘মিষ্টি সাক্ষাৎ’-এর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই বিদ্রুপের তিরে বিদ্ধ স্বস্তিকা।
বর্তমান শাসক দলের সঙ্গে বরাবরই ‘সেফ দূরত্ব’ বজায় রেখেই চলেন স্বস্তিকা। কট্টর সমালোচনা না করলেও, প্রয়োজনে মুখ খুলতেও পিছপা হন না তিনি। সেই স্বস্তিকাকে মমতার সঙ্গে একফ্রেমে দেখে অনেকেই অবাক,প্রকাশ্যে অভিনেত্রীকে ‘খামতি দিদিমণি’ বলে কটাক্ষ করেন বাম সমর্থক অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। নেটিজেনদের কেউ তাঁকে ‘চটিচাটা’ আখ্যা দিল, তো কেউ ‘মেরুদণ্ডহীন’। এত শোরগোল, এত বাক্যবাণের বন্যায় বিব্রত স্বস্তিকা। অবশেষে রবিবার রাতে ফেসবুকে পালটা জবাব দিলেন স্বস্তিকা।
কী লিখছেন তিনি?
স্বস্তিকার সাফাই, 'আমি একটা ক্লাবের সাথে কার্নিভালে গেছিলাম, এই প্রথমবার। ৯৫ টার ও বেশি ক্লাব যেখানে যোগদান করেছে, সেই সমস্ত প্যান্ডেলে হাজার হাজার মানুষ ঠাকুর দেখতে গেছেন, সেই সমস্ত ক্লাব আমাদের রাজ্যের। কালকেও উপচে পরা ভীড় ছিল। রাজ্যের কি খারাপ অবস্থা সেটা ভেবে কেউ বাড়িতে বসে পুজো বয়কট করেনি।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁকে নমস্কার করে বিজয়া জানানোটা ভদ্রতা, সৌজন্য। আমায় দুটো চকলেট দেওয়াটা ওনার ইচ্ছে, সেটা খেয়ে নেওয়াটা আমার'।
এরপর খানিক সুর চড়িয়ে অভিনেত্রীর জবাব, 'চকলেট নিয়েছি ইলেকশন টিকিট নয়, চকলেট খেয়েছি মোটা টাকার ঘুষ নয়। আমরা একটা সভ্য দেশে বাস করি, বর্বর নই। কাল দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলেও একই ভাবে নমস্কার করব কারণ সেটাই ঠিক।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিত্বকে আমি শ্রদ্ধা করি। তার মানে রাজনৈতিক মতবিরোধিতার সঙ্গে আপোষ করা নয়। যেটা অন্যায় তা নিয়ে নিশ্চই বলব কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত বিষয় নিয়ে আমায় জিহাদ ঘোষনা করতেই হবে নাহলেই আমার মেরুদন্ড ধ্বসে পরবে এমন কোনো দাসখত আমি লিখিনি। আর আমার ধ্যান ধারণা বিবেক বিচার আপনাদের কথায় ওঠা নামা করে না।'
ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ হলে একইভাবে সৌজন্য বিনিময় করবেন অভিনেত্রী- তা স্পষ্ট করে দেন। শেষে তাঁর সংযোজন- ‘অসভ্য হওয়ার জন্য যে শিরদাঁড়াহীনতা লাগে সেটাও আমার নেই। তাই বেশ করেছি’।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একগুচ্ছ ছবি পোস্ট করে স্বস্তিকা লিখেছিলেন- 'অনেক বছর পর মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হল গতকাল কার্নিভালে। কী দারুণ একটা ইভেন্টের আয়োজন করেছিলেন তিনি। খুব ভালো কাজ করেছে কলকাতা পুলিশও। আমি সবসময়ই প্রশংসা করে এসেছি দিদির লড়াকু ক্ষমতা আর মনোবলের। ওঁকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে চকোলেট উপহার পেলাম (হার্ট ইন আই ইমোজি)। ধন্যবাদ রাজ ছবিগুলি তুলে দেওয়ার জন্য, এগুলো ভীষণ মিষ্টি। দক্ষিণপাড়ার পুজো উৎসব কমিটির সঙ্গে ওখানে থাকাটা খুব মজাদার হল। আসছে বছর আবার হবে।’
যত বিতর্কের সূত্রপাত স্বস্তিকার এই পোস্ট ঘিরেই। স্বস্তিকার পালটা জবাবের পর পুজো কার্নিভাল ঘিরে তৈরি এই রাজনৈতিক কচকচানি থামে কিনা সেটাই দেখবার।