আচমকাই চলে গেলেন সঙ্গীতশিল্পী বাণী জয়রাম! শনিবার চেন্নাইয়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে বর্ষীয়ান গায়িকার দেহ, জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ঘটনায় চাঞ্চল্য দক্ষিণী সঙ্গীতমহলে। গত মাসেই ভারত সরকার পদ্ম ভূষণ সম্মানে ভূষিত করেছিলেন ‘আধুনিক ভারতের মীরা’ হিসাবে পরিচিত এই গায়িকাকে। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ঝুলিতে আসে তাঁর। সম্মান পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন বাণী জয়রাম। কিন্তু কে জানতো সশরীরে এই সম্মান গ্রহণ করতে পারবেন না তিনি! এই গায়িকা নিজের জীবদ্দশায় দশ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর? এখনও তা স্পষ্ট নয়। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে চেন্নাই পুলিশের থাউসেন্ড লাইটস থানার আধিকারিকরা।
বাণী জয়রামের জন্ম তামিল নাড়ুর ভেলোরে এক তামিল পরিবারে। ১৯৪৫ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন শিল্পী, জন্মসূত্রে তাঁর নাম ছিল কলাইবাণী। সঙ্গীত তাঁর রক্তে, ছোট থেকেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। মায়ের অনুপ্রেরণা নিয়েই গুরু রঙ্গ রামানুজ আয়েঙ্গারের কাছে গানের সাধনা শুরু করেন ‘আধুনিক ভারতের মীরা’। পরবর্তীতে কাদালুর শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার, টি আর বালাসুব্রহ্মণিয়ান এবং আর এস মণির মতো গুরুদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্ণাটকী সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন।
১৯৬০ এর দশকের শেষে বিয়ের পর স্বামী জয়রামের হাত ধরে মুম্বইতে হাজির হন বাণী। এরপর শুরু তাঁর নতুন সফর। বসন্ত দেশাইয়ের প্রিয় পাত্রী ছিলেন গায়িকা। সেই সুবাদেই হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গুড্ডি’ ছবিতে গানের সুযোগ পান, সেটা ছিল তাঁর বলিউড প্লে-ব্যাকে ডেবিউ। জয়া ভাদুড়ির (এখন বচ্চন) লিপে বাণী কন্ঠের ‘বোল রে পাপিহরা’ গান আজও জনপ্রিয়। হেমা মালিনী অভিনীত গুলজারের ‘মীরা’ ছবির সব গানে কন্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। সুর ছিল রবি শঙ্করের। লতা জমানায় বলিউডে প্লে-ব্যাকের দুনিয়ায় অনেকটাই কোণঠাসা ছিলেন। তবে দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে গান করেছেন তিনি। গেয়েছেন বাংলা গানও। বাণী জয়রাম আধুনিক বাংলা গান রেকর্ড করেছিলেন, গেয়েছিলেন ‘আমার রাধা হওয়া আর হল না…'। শেষ বয়সে প্রচারের অন্তরারেই দিন কেটেছে প্রায় ১৯টি ভাষায় গান গাওয়া বাণী জয়রামের।
গত মাসে পদ্ম ভূষণ সম্মান পেয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘দেরিতে এলেও এই সম্মানের জন্য আমি খুশি… গর্বিত’। তাঁর আচমকা মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি।