মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মসনদে বসেই একাধিক প্রকল্প চালু করেছেন। রূপশ্রী, সবুজ সাথী, ইত্যাদি তো আছেই। সঙ্গে মহিলাদের খানিক স্বাবলম্বী করতে এনেছেন লক্ষ্মী ভান্ডার এবং বিধবা ভাতা। দলমত নির্বিশেষে বাংলার বহু মহিলারাই এই প্রকল্পের সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন। মাস গেলে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এতদিন পেতেন ৫০০ টাকা। মার্চ থেকে সেটা বেড়ে হয়েছে ১০০০। আর সেই লক্ষ্মী ভান্ডারের টাকা পেয়ে কিনা সেটা দিয়ে রূপচর্চা করছেন গ্রামের মহিলারা!
গ্রাম্য পরিবেশে অনেকের কাছেই বিউটি পার্লার যাওয়া বা কাউকে দিয়ে রূপচর্চা করানো নেহাতই বিলাসিতা ছিল এক সময়। এমনকি বিয়েতেও বাড়ির কেউ বা কোনও আত্মীয় সাজিয়ে দিতেন। কিন্তু সময় বদলেছে। মাস গেলে লক্ষ্মী ভান্ডারের যে টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আসছে সেটা দিয়ে গ্রামের মহিলারা বিউটি পার্লার যাচ্ছেন। আর সেখানে গিয়ে কেবল ফেসিয়াল করছে যে সেটা নয়, হাল আমলের পেডিকিওর, ম্যানিকিওর করাচ্ছেন। বাদ যাচ্ছে না হেয়ার ট্রিটমেন্ট। বিয়ের জন্যও ডাক পড়ছে MUA (মেকআপ আর্টিস্ট)- দের। শুধু কি তাই! যেহেতু চাহিদা বাড়ছে সেহেতু গ্রামে গঞ্জে গজিয়ে উঠেছে বহু পার্লার।
আরও পড়ুন: 'আবার ওখানকার পোস্ট অফিসে ঢুকে পড়বেন না...' কাশ্মীর ট্রিপের ছবি পোস্ট করে ট্রোল্ড রূপঙ্কর
বাংলার যে অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন থাকেন অর্থাৎ ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার গ্রামেও রমরমিয়ে চলছে পার্লার। আর এই চাহিদার জোগান মেটাতে এবং একই সঙ্গে স্বাবলম্বী হতে বহু মহিলারা বিউটিশিয়ান কোর্স করছেন। তৈরি করছেন নিজের পার্লার।
কী বলছে রিপোর্ট?
২০২১ সালে চালু হয়েছে লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্প। আর তারপর মাত্র তিন বছরে রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৬ হাজারের মতো নতুন বিউটি পার্লার তৈরি হয়েছে। এমনটাই জানা গিয়েছে রাজ্য পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরের হিসেব থেকে। ফলে বুঝতেই পারছেন সরকারি হিসেব যদি এটা বলে, বেসরকারি ভাবে সংখ্যাটা আরও কত বেশি। অনেকেই পার্লার তৈরি করার সময় যথাযথ অনুমতি নেন না। ট্রেড লাইসেন্স করান না। কেউ কেউ আবার আলাদা পার্লার না করে বাড়ি গিয়েও এসব কাজ করে থাকেন। ফলে গ্রামীণ বাংলায় বিউটিশিয়ান বা পার্লারের সংখ্যা আসলে ঠিক কত সেটার হিসেব পাওয়া সত্যিই কঠিন!
আরও পড়ুন: 'অনুপম কেমন বর?' দিদি নম্বর ওয়ানে রচনার প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা ‘নতুন বউ’ প্রশ্মিতা!
এই সময়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাওড়ার গ্রামীণ অঞ্চলের এক মহিলা জানিয়েছেন তাঁর পার্লারে যাঁরা আসেন অধিকাংশই নিম্নবিত্ত পরিবারের। লক্ষ্মী ভান্ডারের টাকা ছাড়া সেই মহিলাদের অর্থ রোজগারের অন্য উপায় নেই। তাই রূপচর্চার জন্য বেশি খরচ সম্ভব নয়। অতএব গ্রাহকদের কথা ভেবে পার্লারের সমস্ত পরিষেবার খরচ কমিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি এও স্বীকার করেছেন লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্প শুরু হওয়ার পর গ্রামীণ অঞ্চলেও মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। সৌন্দর্যের প্রতি নজর দেন তাঁরাও। এর প্রধান কারণ নিজেদের শখের কোনও কাজের জন্য আর কারও থেকে হাত পাততে হয় না তাঁদের।