বাচ্চারা আঙুল খায়- এ তো খুবই চলতি লব্জ। প্রায়ই যা শোনা যায়। কিন্তু তুলনায় যা কম শোনা যায় তা বড়দের আঙুল খাওয়া বা চোষা। শুনতে কারও কারও অবাক লাগতে পারে। কিন্তু এ নেহাত কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বরং বড় হয়েও অনেকে এই অভ্যাস ছাড়তে পারেন না। এমনকী ১৮ পেরনোর পরও দেখা যায় অভ্য়াসটি রয়ে গিয়েছে। এই ঘটনার তথ্যপ্রমাণও রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যেমন ধরুন মুম্বইয়ের এমজিএম ডেন্টাল কলেজের একটি গবেষণার কথা। সেখানে ১৮ বছরের বেশি বয়স এমন ৪৯০ জনের মধ্যে একটি সমীক্ষা করে ছয় সদস্যের গবেষক দল। তাতে দেখা গিয়েছে, ৪১ শতাংশের মধ্যে রয়েছে আঙুল খাওয়ার প্রবণতা। ইন্দোরের মর্ডান ডেন্টাল কলেজের দুই গবেষকের গবেষণাপত্রেও উল্লেখ রয়েছে ২৬ বছর বয়সি এক তরুণীর। যার ছোট থেকে আঙুল খাওয়ার অভ্যাস।
(আরও পড়ুন: হঠাৎ করে রক্তচাপ কমছে! ডেঙ্গি হতে পারে, টেস্ট করান, বদলেছে উপসর্গের ধরন)
কেন বড়দের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যায়? এই ব্যাপারে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন বিশিষ্ট মনোবিদ শ্রীময়ী তরফদার। ‘প্রাথমিক ভাবে ব্যাপারটা হল ওরাল নিড বা মৌখিক চাহিদা । জন্মের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত সেটা থাকে। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ভাষায় একে ওরাল স্টেজ বলে। নিজেদের আরামের জন্য শিশুরা এটা করে। এক বছর বয়সী শিশুদের কাছে মায়ের স্তনবৃন্ত সবচেয়ে শান্তিদায়ক। তারই বিকল্প এই আঙুল চোষা বা চুষিকাঠি খাওয়ার প্রবণতা।’
(আরও পড়ুন: বিলাসবহুল প্রমোদতরী চড়তে খসেছিল ২৭ লাখ! কাদায় পড়ে এখন ‘ছেড়ে দে মা…’ দশা)
এটি সংশোধনের জন্য ছোটবেলায় বাবা-মায়ের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলেও জানান তিনি। ‘অল্প বয়সে অভ্যাসটা সংশোধন করাতে কিছু ব্যবস্থা নেন বাবা-মায়েরা। কিন্তু সে ব্যবস্থা কাজ না করলে সমস্যা বাড়ে। দেখা যায়, নিজেকে শান্ত রাখতে বড় বয়সেও সে আঙুল খাচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্কদের আঙুল খাওয়া বা চোষাকে শৈশবজনিত স্নায়বিক আচরণ (neurotic behavior of childhood) বলা হয়।’
বড়দের মধ্যে আঙুল চোষা কতটা দেখা যায় এই প্রবণতা? শ্রীময়ীর কথায়, ‘বড়দের মধ্যে এই জিনিসটা মাঝেসাঝেই দেখা যায়। এই নিয়ে ক্লিনিকে কথা বলতে অনেকে দ্বিধা করেন। যারা স্বীকার করেন, তাদের অনেকেই আবার অন্যমনস্ক হয়েই আঙুল খান। এমনটাই বলতে শুনেছি— আমি তো বুঝতেই পারি না কখন আঙুুল মুখের ভিতর চলে যাচ্ছে।’
কীভাবে এই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়? এই প্রসঙ্গে শ্রীময়ী বলেন, ‘বিহেভিয়ার থেরাপি দিয়ে একে মোকাবিলা করা যায়। বিহেভিয়ার ম্যানেজমেন্ট টেকনিক ও কনটিনজেন্সি ম্যানেজমেন্ট নামক দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন মনোবিদরা। পাশাপাশি আলাদা করে নজরদারি রাখতে হয়। তবে এও দেখা গিয়েছে, শুধু থাম্ব গার্ড লাগিয়েও অভ্যাসে বদল আসে।’