নবরাত্রির সূচনা হয়ে গেল। একাধিক বাড়ি, পাড়ায় দেবী দুর্গার আগমন ঘটে গেছে। কোথাও কোথাও তো এবার উদ্বোধন পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে! ফলে দুর্গাপুজো এই বছর একদম দোরগোড়ায় এসে কড়া নাড়ছে যে সেটা বলাই যায়। কিন্তু কলকাতার দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে থিম পুজোগুলো যতটা জনপ্রিয়, জেলার ক্ষেত্রে নজর কাড়ে বিভিন্ন জমিদার বাড়ি এবং রাজবাড়ির পুজোগুলো। এখানে যে কত ইতিহাস, স্মৃতি মিশে রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ঠিক তেমনই এক জমিদার বাড়ি হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের মনিরামবাটি জমিদার বাড়ি।
এই জমিদার বাড়িটি একেবারেই ভগ্নপ্রায়। আশপাশে ঘুরলেই কেমন যেন একটা গা ছমছমে ব্যাপার। আর সেই বাড়ির সামনেই আছে একটি বহু বছরের পুরনো দুর্গা দালান। আর এই দালানেই পুজো করা হয় দেবী দুর্গাকে। গত তিনশো বছর ধরে এখানেই পুজো করে আসা হচ্ছে দেবীকে। আর এই পুজোর মধ্যে দিয়েই ধরা দেয় আভিজাত্য এবং অতীতের জৌলুস। এই বাড়ির দুর্গা মণ্ডপের দেওয়ালের মধ্যে যে কাজগুলো রয়েছে তা আজও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।
গ্রামের মানুষরা এর আগে দুর্গা দালানে বসেই পুজো দেখতেন। আর জমিদার বাড়ির মহিলারা থাকতেন এই মন্দিরের ঠিক পাশেই দোতলার খড়খড়ির আড়ালে। তাঁরা সেখানে বসেই পুজো দেখতেন। পর্দানসিন ছিলেন এই বাড়ির মহিলারা। অঞ্জলি দিতে হলেও আড়াল থেকে দিতে হতো। এমনকি এই নিয়ম আজও মানা হয়। এই বাড়ির মহিলারা যখন অঞ্জলি দিতে আসেন তখন আজও চারদিক কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তাঁদের অঞ্জলি হতে গেলে কাপড় সরিয়ে দেওয়া হয়।
পুজোর আগেই দুর্গা দালান এবং আশপাশের ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। বাড়ির পুরুষরাই মূলত এই কাজ করে থাকেন। প্রতিপদ থেকেই এই বাড়ির পুজো শুরু হয়ে যায়। দশমীর দিন দেবী প্রতিমা বিসর্জনের পর সকলকে মিষ্টিমুখ করানো এই বাড়ির রীতি। আর সেদিন রাতে গোটা গ্রামের লোককে খাওয়ানো হয় এই দুর্গা দালানে বসিয়েই।
এই জমিদার বাড়িতে গেলে দেখা মেলে এক চালার প্রতিমার। একাধিক অতীতের নিয়ম এখনও মানা হয়। এই যেমন বিধবার হাত দিয়েই ধুনো পোড়ানো হয়। এছাড়া পুরনো প্রথা মেনে আজও কুমারী পুজো করা হয়ে থাকে এই বাড়িতে। মনিরামবাটি জমিদার বাড়ির এই ঐতিহ্যশালী পুজো এবং তার একাধিক অতীতের রীতিনীতি মেনে পুজো দেখতে আজও অনেকেই ভিড় জমান।