২০২২ সালের পিতৃপক্ষ শুরু হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে। এটা শেষ হবে মহালয়ার দিন। যেদিন পিতৃপক্ষ শেষ হয় আর দেবীপক্ষ শুরু হয় সেই দিনটিকে বলা হয় মহালয়া। হিন্দুমতে, এই পিতৃপক্ষ হল এমন এক পক্ষ যেখানে পূর্বপুরুষদের জন্য তর্পণ করা যায়। এই পক্ষটি মোটেই কোনও শুভ কাজের জন্য ভালো সময় নয়, এই সময়টায় মূলত, শ্রাদ্ধ, তর্পণ, ইত্যাদি কাজ কর্ম করা হয়ে থাকে।
ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন মাসের অমাবস্যা অবধি এই পক্ষ চলে। হিন্দু পরিবার পিতাকে পূজা করা হয়। শাস্ত্র মতে, যখন কোনও শিশুর জন্ম হয় তখন সেই ব্যক্তির উপর তিন ধরনের ঋণ বর্তায়, এই ঋণগুলো হল পিতৃ ঋণ, দেব ঋণ এবং ঋষি ঋণ। এর মধ্যে সব থেকে জরুরি হল পিতৃ ঋণ। আর এই ঋণ থেকে পূর্বপুরুষদের মুক্ত করতেই শ্রাদ্ধ করা হয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে কে তর্পণ করে থাকেন? মূলত পুত্রই এই তর্পণ করে থাকে। কিন্তু কিছু শাস্ত্রে মহিলাদেরও তর্পণ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। যখন পুত্র থাকে না, ভাইয়ের আগেই মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর শ্রাদ্ধ করার অধিকার আছে। এছাড়া হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী মৃতব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন যে কোনও ব্যক্তিই তর্পণ করতে পারেন। রামায়ণে যখন দশরথ মারা যান তখন সীতা তাঁর পিণ্ডদান করেছিল রামের অনুপস্থিতিতে।
অনেক শাস্ত্রকারের মতেই শাস্ত্রে কোথাও লেখা নেই যে মহিলারা তর্পণ করতে পারেন না। শ্রাদ্ধে যেমন মৃতব্যক্তির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানো হয় তর্পণের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়ে থাকে। মহাভারতেও মহিলাদের তর্পণ করতে দেখা যায়। এমনকি মৃত ব্যক্তি যদি অবিবাহিত হন তাহলে তাঁর মা এবং বোনও তর্পণ করতে পারবেন। কালো তিল এবং ভাতের মণ্ড বানিয়ে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করা হয়ে থাকে। কাককে এক্ষেত্রে যমের দূত হিসেবে মনে করা হয়। কাক যদি সেই মণ্ড খায় তবে মনে করা হয় যে পূর্বসূরিদের আত্মা শান্তি পেল। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী পিণ্ডদান করলে আত্মা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে যায় এবং তাঁকে আর জন্ম নিতে হয় না।