হিন্দু-মুসলিম ঐক্য নিয়ে ‘সদর্থক’ বার্তা দিয়েছেন সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত।। কিন্তু খাতায়-কলমে সেই কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে ধন্দে আছেন বিরোধীরা।
এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি যেমন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রধানের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, যাঁরা গণপিটুনিতে জড়িত ছিলেন, তাঁরা হয়তো গরু ও মহিষের মধ্যে পার্থক্য জানেন না। কিন্তু জুনেইদ, আখলাখ, পেহলু, আলিমুদ্দিনের মতো লোকেদের হত্যা করার জন্য তাঁদের পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে। যাঁরা গো-রক্ষকদের হাতে খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ। একাধিক টুইটে ওয়েইসি বলেন, ‘আলিমুদ্দিনের হত্য়াকারীদের মালা পরানো পরিয়েছিলেন একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, আখলাখের হত্যাকারীরে শরীরে তেরঙা দেওয়া হয়েছিল, আসিফের হত্যাকারীদের সমর্থনে মহাপঞ্চায়েত ডাকা হয়েছিল। যেখানে বিজেপির এক মুখপাত্রকে বলতে শোনা গিয়েছিল, আমরা কি খুনও করতে পারি না?’ আসিফ খানের হত্যাকান্ডে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের সমর্থনে হরিয়ানায় যে মহাপঞ্চায়েত হয়েছিল, সেটির কথাই বলেছেন ওয়েইসি।
রবিবার গাজিয়াবাদে খাওয়াজা ইফতেকারের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের উপর গো-রক্ষকদের বিরুদ্ধে যে হামলার অভিযোগ ওঠে, তা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন সংঘ প্রধান। তিনি জানান, গরুকে ভারতে পুজো করা হয়। কিন্তু গো-রক্ষার নামে হিংসাত্মক পথে যাওয়ার ঘটনা কখনওই বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, ‘আইন নিজস্ব পথে চলবে। পক্ষপাতহীনভাবে ওদের (পুলিশকে) তদন্ত করতে হবে এবং অভিযুক্তদের শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু যে গণহত্যায় জড়িত থাকে, সে কখনও হিন্দু হতে পারে।’
যদিও ভাগবতের সেই মন্তব্যে বেশি ভরসা করতে নারাজ বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) সুপ্রিমো মায়াবতী। তাঁর অভিযোগ, আরএসএস যা বলে থাকে, বাস্তবে সেটার প্রয়োগ করে না। তাই ভাগবতের মন্তব্যের বাড়তি কোনও গুরুত্ব নেই। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা হিন্দুত্ববাদের নীতি-বিরোধী এবং সব মানুষের একই ডিএনএ আছে যে ভাষণ দেওয়া হয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ তাঁরা যা বলেন, আরএসএস ঠিক তার উলটো করার জন্য পরিচিত।’
রবিবার ভাগবত বলেছিলেন, আরএসএস সংখ্যালঘু-বিরোধী বা ভারতে মুসলিমরা বিপদের মধ্যে আছেন বলে যে ‘ভয়’ দেখানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সংঘ প্রধান বলেন, ‘যখন লোকজন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কথা বলেন, তখন আমরা বলি যে আমরা ইতিমধ্যে ঐক্যবদ্ধ। আমরা পৃথক নই।’ তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলি মানুষকে একত্রিত বা বিবাদ বৃ্দ্ধির ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে না। তবে প্রভাবিত করতে পারে। ভারতে সংখ্যাগুরুদের আধিপত্য বাড়ছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সেই ভয়ও কাটানোর চেষ্টা করেন ভাগবত। দাবি করেন, সংখ্যালঘুদের উপর যখন অত্যাচার হয়, তখন সংখ্যাগুরুদের তরফেই প্রতিবাদের আওয়াজ তোলা হয়। সেখানেই অবশ্য থামেননি ভাগবত। তিনি বলেছিলেন, 'কেউ যদি বলেন, মুসলিমদের ভারতে থাকা উচিত নয়, তাহলে তিনি হিন্দু নন।' সঙ্গে দাবি করলেন, আরএসএস বরাবর ভারতের মানুষের ডিএনতে বিশ্বাস করে এসেছে। আর হিন্দু এবং মুসলিমদের একই চোখে দেখে এসেছে।
সেই মন্তব্যের সমর্থনে মুখ খুলেছে বিজেপি। রাজ্যসভায় সাংসদ রাকেশ সিনহা বলেন, ‘উনি ওদের (বিএসপি এবং এআইএমআইএম) চিন্তাধারার রাজনীতি এবং তোষামোদের সমালোচনা করেছেন। তাই ওদের প্রতিক্রিয়া একই ধরনের।’ ভাগবতের মন্তব্যকে ‘প্রগতিশীল’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।