বিশ্ব জুড়ে প্রতি ৯ জুন সাড়ম্বরে পালিত হয় আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। রাষ্ট্রসংঘের তরফে এই দিনটিকেই আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভারতের পড়শি দেশের কিন্তু এই শব্দটাকে নিয়ে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। বাংলাদেশ আদিবাসী শব্দটিকে স্বীকৃতিই দিতে চায় না।
বাংলাদেশ সরকারের মতে আদিবাসী মানেই তাঁরা এক দেশের আদি বাসিন্দা নন, বরং তাঁরা দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী।এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কদিন আগেই সেদেশের সমস্ত গণমাধ্যমকে একটি চিঠি দিয়েছে। এবং সেই চিঠিতে জানানো হয়েছে গণমাধ্যমে যেন আদিবাসী শব্দটিকে ব্যবহার না করা হয়।
তবে এমনটা প্রথম নয়, ওপার বাংলার সরকার কখনই আদিবাসী শব্দটিকে মান্যতা দেয়নি। বাংলাদেশের প্রাক্তন বিদেশ মন্ত্রী দীপু মনি ঢাকায় বিদেশের রাজনীতিবিদদের ২০১১ সালে বলেছিলেন তাঁরা যেন কেউ চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বাসিন্দাদের আদিবাসী না বলেন। তাঁর মতে একমাত্র বাঙালিরাই এই দেশের আদিবাসী। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে যাঁরা থাকেন তাঁরা এই ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর জনগণ। এরপর তিনি প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের অনুরোধ করেছিলেন তাঁরা যেন আর আদিবাসী শব্দটিকে ব্যবহার না করে।
সরকারের তরফে কী কী যুক্তি দেওয়া হয়েছিল এই বিষয়ে দেখে নিন।
- বাংলাদেশের মানুষের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি প্রায় চার হাজার পুরনো। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সেটাই দাবি করেছে, তবে যাঁরা চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে থাকেন তাঁরা ১৬ শতক থেকে মায়ানমার এবং কম্বোডিয়া থেকে আসেন এখানে। তাই তাঁরা মোটেই বাংলাদেশের আদিবাসী নন। এমনটাই অভিমত বাংলাদেশ সরকারের।
- সেদেশের সরকারের যুক্তি অনুযায়ী যাঁরা আদিবাসী বলে আদতে পরিচিত তাঁদের প্রকৃত আদিবাসী হতে হলে কলোনিয়াল অথবা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কলোনাইজেশন হতে হয়। তবে এক্ষেত্রে তেমন কিছুই হয়নি।
- অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় যাঁদের আদিবাসী বলা হয় তাঁদের ক্ষেত্রে কলোনিয়াল অথবা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কলোনাইজেশন হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে হয়নি।
- অন্যদিকে ১৯৯৭ সালের সম্পাদিত শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বর্ণন করা হয়েছে। তাই সরকার জানিয়েছে ওখানকার নেতারা এই উপজাতি শব্দটাকে মেনে নিয়েছে। তাই তাঁদের আদিবাসী বলা উচিত নয়।
- এছাড়া রাষ্ট্রসঙ্ঘের কোনও সর্বসম্মত আদিবাসীর সংজ্ঞা নেই। ২০০৭ সালের ঘোষণাপত্রে যেখানে আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলা হয়েছিল সেখানে তাঁদের আলাদা কোনও সংজ্ঞা বলা হয়নি।
আদিবাসীদের পক্ষে কী যুক্তি দেওয়া হচ্ছে?
চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের মতে তাঁরা আদিবাসী। সেখানকার এক নেতা, ইলিরা দেওয়ানের মতে, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালিদের তুলনায় তাঁদের আচার আচরণ, ভাষা অনেকটাই আলাদা। তাই তাঁরাই প্রকৃত আদিবাসী। কে আগে এসেছে বা পরে সেটা সেখানে বিবেচ্য নয়। আদিবাসী মানে যাঁরা মূলস্রোত থেকে আলাদা। যাঁদের ভাষা, সংস্কৃতি মূল ধারার থেকে আলাদা হয় তাঁরাই আদিবাসী।
ফলে বাংলাদেশ সরকার এবং চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের মত এক নয় এই ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ সরকার তাঁদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবেই বিবেচনা করে এবং করবে, তবে তাঁরা যাতে সমস্ত অধিকার পায় সেটাও নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছ। তাঁদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধাও দিচ্ছে সরকার।