তিব্বতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছে ইয়ারলাং জ্যাংবো নদীর উপরে বিশাল বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করেছে চিন। রবিবার এই খবর প্রকাশ করেছে চিনের সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদমাধ্যম। এই বাঁধ নির্মাণ হলে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবল জলাভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্বশাসিত তিব্বত অঞ্চলের উৎসস্থল থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে ইয়ারলাং জ্যাংবো নদী, অরুণাচলে পৌঁছে যার নাম হয়েছে সিয়াং। অসমে প্রবেশ করার পরে এই সিয়াংই পরিচিত হয় ব্রহ্মপুত্র নামে এবং এর পর ফের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এই বিশাল নদী।
চিনা সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অরুণাচল সীমান্তের কাছাকাছি তিব্বতের মেডগ কাউন্টিতে ব্রহ্মপুত্রের উপরে এই বাঁধ প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করেছে চিন সরকার।
এর আগেও ব্রহ্মপুত্রের উপরে একাধিক ছোট বাঁধ নির্মাণ করেছে বেজিং। নতুন প্রকল্পে উৎপাদিত জলবিদ্যুতের পরিমাণ বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রকল্প, মধ্য চিনের থ্রি গর্জেস ড্যাম-এর চেয়ে প্রায় তিন গুণ হতে পারে বলে জানিয়েছে চিনা সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস।
জানা গিয়েছে, নতুন এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে চিনের জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই। গত সপ্তাহে এক সম্মেলনে চিনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ইয়্যান ঝিয়ং জানিয়েছেন, ‘ইতিহাসে এমন প্রকল্পের উল্লেখ নেই। চিনের জলবিদ্যুৎ শিল্পে এ এক ঐতিহাসিক সুযোগ।’ তিনি জানিয়েছেন, মূল উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও পরিবেশ সংরক্ষণ, জাতীয় নিরাপত্তা, জীবন যাপনের মানোন্নয়ন, শক্তি উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাঁধ নির্মাণের জন্য গত ১৬ অক্চোবর তিব্বতের স্বশাসিত প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছে নিগম। গত সপ্তাহে কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়না-র ইয়ুথ লিগের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নতুন বাঁধ প্রকল্পের খবর প্রথম প্রকাশ পায়।
ইয়্যান জানিয়েছেন, ইয়ারলাং জ্যাংবো নদীর উপরে প্রস্তাবিত বাঁধ প্রকল্প বছরে ৬০০ কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে, যা বছরে ৩০০ কোটি কিলোওয়াট কার্বনমুক্ত ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞরা অতীতে একাধিক বার জানিয়েছেন যে, সীমান্ত অতিক্রমকারী একাধিক নদীর অবস্থানের সুবাদে ভারতের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে চিন। বিশেষ করে তিব্বত অঞ্চল দখলে আসার পরে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম নদীগুলি, যেমন সিন্ধু নদ, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, ইরাবতী, সলউইন, ইয়াংৎসে ও মেকং নদীর উৎস রয়েছে বেজিংয়ের কব্জায়। এর মধ্যে ৪৮% নদীর জলই ভারতের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে।
মনে রাখা জরুরি, ২০১৭ সালে ডোকলামে ৭৩ দিনের সামরিক দ্বৈরথের জেরে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগকারী করিডরের কাছাকাছি সড়ক প্রকল্পের কথা গোপন করে চিন। ২০১৮ সালে অবশ্য ভারত ও চিনের মধ্যে জল সম্পদ, নদীখাত উন্নয়ন এবং গঙ্গা পুনরুজ্জীবিত প্রকল্প সংক্রান্ত একটি মউ সাক্ষরিত হয়। তার শর্ত অনুযায়ী নদীখাতের জলস্তর বৃদ্ধি পেলে প্রতি বছর ভারতকে সে সম্পর্কে তথ্য দিতে বাধ্য চিন। বর্তমানে দুই দেশের কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক যে অবস্থায় পৌঁছেছে, তাতে চুক্তি অনুসরণে বিচ্যুতি ঘটছে বেজিংয়ের।