ক্লাসে বসা নিয়ে বচসা। আর তার জেরে ক্লাসরুমের ভেতরেই সহপাঠীকে গুলি করে খুন করল ১৪ বছর বয়সী দশম শ্রেণির এক ছাত্র। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার শিকারপুর শহরে। আচমকা হওয়া এই ঘটনায় আতঙ্কে চিৎকার করে ক্লাসরুম ছেড়ে পালায় অন্য পড়ুয়ারা। তখনই ছুটে এসে অভিযুক্ত ছাত্র সানির হাত থেকে পিস্তলটি ছিনিয়ে নেন স্কুলের অধ্যক্ষ প্রভাত গুপ্ত। সে সময় ধস্তাধস্তির সময় হাতে সামান্য চোট পান তিনি।
জানা গিয়েছে, শিকারপুর শহরের সুরজভান সরস্বতী ইন্টার কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়ত সানি ও টারজান (১৫)। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে ক্লাস চলাকালীন টারজানকে তার জায়গা ছেড়ে অন্য কোথাও বসতে বলে সানি। টারজান সে কথা না শোনাতেই সমস্যার সূত্রপাত। অধ্যক্ষের দাবি, সহপাঠীদের নজর কাড়তেই সানি ওই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে স্কুলে এসেছিল। জানা গিয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রটির লাইসেন্স রয়েছে সানির কাকার নামে। তিনি আগে সেনাবাহিনীতে ছিলেন।
বুলন্দশহরের সিনিয়র পুলিশ সুপার এস কে সিং জানিয়েছেন, এ ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে শিকারপুর থানা। অভিযুক্ত নাবালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এক ছাত্র কীভাবে ব্যাগের ভেতর পিস্তল নিয়ে স্কুলে আসতে পারে, তা নিয়ে। অধ্যক্ষ প্রভাত গুপ্তর সাফাই, ‘পড়ুয়ারা ব্যাগে করে মোবাইল বা অন্য কিছু আনছে কিনা তা দেখতে আমরা নিয়মিত ব্যাগ পরীক্ষা করি। কিন্তু সানি কোনওভাবে ব্যাগে পিস্তলটি নিয়ে স্কুলে এসেছে।’
ঘটনার ব্যাপারে অধ্যক্ষ জানান, দ্বিতীয় পিরিয়ড শেষে যখন শিক্ষক ক্লাসরুম ছেড়ে বেরিয়ে যান ঠিক তখনই ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে তার সহপাঠী টারজানকে লক্ষ্য করে পরপর চারটি গুলি চালায় সানি। দুটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও একটি টারজানের হাতে এবং আর একটি মাথায় লাগে। মাথায় লাগা গুলিটি এ পার–ও পার হয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় টারজানের।
সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গেলে টারজানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। শিক্ষক ও পড়ুয়ারা মিলে সানিকে আটকে রাখে এবং তাঁরা শিকারপুর থানায় অভিযোগ জানান। শিকারপুর থানার আধিকারিক অখিলেশ গৌর জানান, মৃত নাবালকের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। শোকসভা শেষে স্কুলটি এদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
জানা গিয়েছে, তফসিলি সম্প্রদায়ের মজদুর পরিবারের সন্তান টারজান তার বাবা–মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান ছিল। যদিও তাঁদের কন্যাসন্তান রয়েছে। অধ্যক্ষ প্রভাত গুপ্ত আরও জানিয়েছেন, এই স্কুলটি পরিচালনা করে আরএসএসের শিক্ষা সংগঠন ‘বিদ্যা ভারতী’। তিনি বলছিলেন, ‘আমি আমরা গোটা কর্মজীবনে এমন ঘটনা কখনও দেখিনি।’