এই সপ্তাহেই উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন ৪২ জন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে দিল্লির পরিস্থিতি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে এখনও ঘৃণা বাসা বেঁধে আছে ছাইচাপা আগুনের মতো, এদিন তার ইঙ্গিত মিলল রাজীব চক মেট্রো স্টেশনে। দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে যারা, তাদের গুলি করে মারার দাবি তুলে স্লোগান দিল কয়েকজন যুবক। ছয়জনকে আটক করে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
প্রথম টুইটারে ভাইরাল হয় ভিডিও যেখানে রাজীব চক স্টেশনে এই স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট ছিল। দেশ কে গদ্দারো কো, গোলি মারা সালো কো- অর্থাত্ দেশের বিরুদ্ধে যারা বিশ্বাসঘাতকা করছে, তাদের গুলি করে মারা উচিত। এই স্লোগানে মুখরিত হয় মেট্রো স্টেশন। প্রথমে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি যে ভিডিওটি সত্যি ও আজকের তোলা। অনেকেই দিল্লি মেট্রোর টুইটার হ্যান্ডেলকে ট্যাগ করে এই বিষয়ে কৈফিয়ত চেয়েছিলেন। এর উত্তরে মেট্টো কর্তৃপক্ষ জানায় যে সকাল ১০.৫২ নাগাদ কয়েকজন যাত্রী স্লোগান দিয়েছিলেন। এদের তখনই দিল্লি মেট্রো কর্তৃপক্ষ, রেল পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানায় যে আইন অনুযায়ী স্টেশন চত্বরে কোনও বিক্ষোভ, প্রদর্শন করার কোনও নিয়ম নেই।সেরকম কেউ করলে তাদের স্টেশন থেকে বার করে দেওয়া হবে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে যে এই ছয় ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রসঙ্গত দিল্লির অভিজাত কনৌট প্লেসে অবস্থিত রাজীব চক মেট্রো স্টেশনটি। বিভিন্ন মেট্রো লাইন এই স্টেশনের ওপর দিয়ে গিয়েছে। দিল্লির সবচেয়ে জনবহুল মেট্রো স্টেশন এটি। সেখানে উঠল উস্কানিমূলক স্লোগান। প্রসঙ্গত দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের সময়, এই স্লোগান আওড়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় নির্বাচন কমিশন। কেন অনুরাগ সহ অন্যান্য নেতারা যারা হেট স্পিচ দেওয়ার দায় অভিযুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে না, সেই প্রশ্ন করেছে দিল্লি হাইকোর্ট। আরেক বিজেপি নেতা যার বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে, সেই কপিল মিশ্রও এই স্লোগান দিয়েছেন অতীতে।
সিএএ বিরোধী ও পন্থীদের মধ্যে গত রবিবার শুরু হয় সংঘর্ষ। সিএএ বিরোধীরা জাফরবাদ স্টেশনে অবস্থান শুরু করার পর থেকেই শুরু হয়েছিল গণ্ডগোল। ক্রমে তা পুরোদস্তুর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নিয়ে নেয়। অনেক কষ্টে এনএসএ অজিত ডোভালের নেতৃত্বে আধা-সামরিক বাহিনীকে রাস্তায় নামিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে। আগামিকাল দায়িত্ব নিচ্ছেন দিল্লির নয়া পুলিশপ্রধান। কিন্তু চাপা উত্তেজনা যে আছেই, এদিনের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।