'এক দেশ, এক ভোট' নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কমিটির মাথায় আছেন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। মনে করা হয়েছিল, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে তা হয়নি। সরকার এই নিয়ে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে। এই আবহে জানা গেল, কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের তরফ থেকে সব রাজনৈতিক দলকে চিঠি পাঠিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হবে এই নিয়ে। এর জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হবে রাজনৈতিক দলগুলিকে। জানা গিয়েছে, ২০২৯ সালে যাতে 'এক দেশ, এক ভোট' নীতি কার্যকর করা যায়, সেই নিয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করার চেষ্টা করবে রামনাথ কোবিন্দের প্যানেল। এর আগে ২২তম আইন কমিশন নীতিগত ভাবে 'এক দেশ, এক ভোট'-কে সমর্থন জানিয়েছিল। এই আবহে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট কেন্দ্রের কমিটির হাতে তুলে দেবে আইন কমিশন। এই আবহে তৃণমূল থেকে কংগ্রেস, সিপিএম, সব দলের থেকেও মত জানতে চাইবে কমিটি।
প্রসঙ্গত, বহুদিন ধরেই 'এক দেশ, এক ভোট' নিয়ে সুর চড়িয়ে আসছিল বিজেপি। এই নীতিতে একই সঙ্গে হবে লোকসভা এবং সব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপির যুক্তি, এতে প্রশাসনিক কাজ মসৃণ হবে। সাধারণ মানুষ আরও ভালো ভাবে পরিষেবা পাবে। নির্বাচনের খরচ কমবে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ভোটের প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলির খরচ এর মধ্যে অবশ্য অন্তর্ভুক্ত। এদিকে সম্প্রতি আইন কমিশন সুপারিশ করেছে, 'এক দেশ, এক ভোট' নীতি গ্রহণ করলে নাকি দেশে ভোটের হার বাড়বে। কারণ তখন মানুষ একটি ভোট দিতেই যাবে পাঁচ বছরে। এবং তাতে উৎসাহ বাড়বে।
তবে এই নীতি কার্যকর করতে অনেক সাংবিধানিক বদল আনতে হবে সরকারকে। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গ, বিহর, কেরল, দিল্লির মতো জায়গায় যেখানে সরকারের মেয়াদ ৫ বছর হয়নি, সেখানকার সরকার আগেই ভেঙে দিতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী, আমাদের দেশে কোনও নির্বাচিত সরকার যদি নিজে থেকে না ভাঙা হয়, তাহলে পূর্ণ পাঁচবছর ক্ষমতায় থাকার অধিকার তাদের রয়েছে। এই আবহে সেই অধিকার খর্ব করা হবে। এদিকে এই 'এক দেশ, এক ভোট' নীতি যদি কার্যকর করা হয়, তারপরও যদি কোনও রাজ্যে সরকার পড়ে যায় এবং সেখানে অন্য কেউ সরকার গঠন না করতে পারে, তাহলে দেখা দেবে সাংবিধানিক শূন্যতা। এদিকে বিরোধীদের এই নীতির বিরোধিতার অন্যতম কারণ, এতে প্রভাবিত হবে ভোটারদের মানসিকতা।
মনে করা হচ্ছে, লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হলে, অধিকাংশ ভোটার হয়ত একই দলকে ভোট দেবে। এই আবহে বিজেপি মনে করছে, তাদের পাল্লা ভারী হতে পারে। কারণ বহু দশক পর ২০১৪ সালে প্রথমবার একক সংখ্যগরিষ্ঠ একটা সরকার পায় ভারত। তাই এখন ভোটাররা দিল্লিতে স্থিতিশীল সরকারই চাইছে। এদিকে অনেক ক্ষেত্রেই হয় যে একজন ভোটার কেন্দ্রীয় স্তরে এক দলকে ভোট দিলেও রাজ্যে তার ভোট বদলে যায়। পশ্চিমবঙ্গেই ২০১৯ সালে ১৮টি লোকসভা আসনে জয়ী হয় বিজেপি। তবে তারপর বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ে তারা। এই আবহে ভোটারদের মানসিকতা প্রভাবিত করতেই 'এক দেশ, এক ভোট' নীতি আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও গত ২০১৯ সালে ওড়িশায় লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গেই হয়েছিল। সেখানে ২১টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৯টিতে জিতেছিল বিজেপি। তবে বিধানসভা ভোটে শাসক বিজু জনতা লকে টেক্কাই দিতে পারেনি তারা।