সূর্যের প্রখর রোদে পুড়ছে দক্ষিণবঙ্গ। ঠিক তখনই একেবারে উলটো ছবি উত্তরবঙ্গে। প্রবল বর্ষণ উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায়। শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, প্রবল বর্ষণে কার্যত বিপর্যস্ত হয়েছে উত্তর সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকা। হড়পা বানের পাশাপাশি ধসের কারণে সিকিমের একাধিক জায়গায় আটকে পড়েছেন প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি পর্যটক। ইতিমধ্যে পর্যটকদের উদ্ধারের কাজ শুরু করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উদ্ধারের কাজে হাত দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
রাতভর প্রবল বর্ষণের ফলে গ্যাংটক–নাথুলা রোডে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। এছাড়াও, লাচেন, লাচুংয়ের মতো একাধিক জায়গায় যোগাযোগ পুরোপুরিভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমসিং লামার নির্দেশে আটকে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধারের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ আবহাওয়া ঠিক থাকলে বিকেলের মধ্যে উদ্ধারকার্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। যদিও তা পুরোটাই নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। ইতিমধ্যেই প্রথম ধাপে কয়েকশো পর্যটককে গ্যাংটকে নিরাপদে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
হড়পা বান এবং ধসের ফলে একাধিক জায়গায় সংযোগকারী সেতু ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন সেতুতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে পারাপার। এছাড়া, ছাঙ্গু লেকেও পর্যটকদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। হড়পা বানে কার্যত ভেসে গিয়েছে রাস্তা ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় বহু রাজ্যের পর্যটকদের পাশাপাশি সেখানে প্রায় আটকে রয়েছেন ৩৬ জন বিদেশি পর্যটক। এছাড়াও প্রচুর গাড়ি আটকে রয়েছে। সিকিম প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩৪৫টি গাড়ি এবং ১১টি মোটরবাইক আটকে পড়েছে। রয়েছেন বহু বাঙালি পর্যটক।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার হড়পা বানে ভেসে যায় পেগঙে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। কার্যত জলপ্রপাতের মত বইতে থাকে জলের ধারা। এর ফলে রাস্তা থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপড়ে গিয়েছে গাছ, বিদ্যুতের তার, মোবাইল টাওয়ার প্রভৃতি। ফলে মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ব্যহত হয়েছে। এখনও বৃষ্টি চলছে উত্তর সিকিমের বহু জায়গায়। এই অবস্থা নতুন করে ধসের আশঙ্কায় প্রশাসনের তরফে পর্যটকদের হোটেলের মধ্যেই থাকতে বলা হয়েছে।
যদিও প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। আবহাওয়া দফতরের তরফ থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত সেখানে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। বৃষ্টির ফলে ইতিমধ্যেই সিকিমের নদীগুলি ফুঁসছে যার ফলে সমতলে অবস্থিত আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার প্রভৃতি জেলাগুলির নদীর জলস্তর বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।