দোকানে বিড়াল, কুকুর এবং খরগোশের বিক্রি নিষিদ্ধ করল নিউ ইয়র্ক। পোষ্যদের অমানবিক বাণিজ্যিক প্রজনন বন্ধ করতে এই সিদ্ধান্ত। গত কয়েক বছর ধরেই 'কুকুর কল'-এর প্রথা বন্ধের ডাক দিয়েছেন পশুপ্রেমীরা। মার্কিন মুলুকের অন্যতম প্রধান শহরও এবার সেই ডাকে সামিল হল।
গভর্নর ক্যাথি হোচুল এই আইনে সই করেছেন। আগামী ২০২৪ সাল থেকে এটি কার্যকর হতে চলেছে। পোষ্য বিক্রেতা ও প্রজনন ব্যবসায়ীদের জন্য কিছুটা সময় দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি এই ধরনের ব্যবসায়ীদের 'অনাথ' কুকর-বিড়ালদের নিয়ে কাজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। মার্কিন মুলুকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার 'পেট শেলটার' রয়েছে। সেখানে মালিকহীন কুকুর, বিড়ালদের এনে সাময়িকভাবে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকে চাইলে কেউ দত্তক নিতে পারেন। তবে বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে প্রজননকারীদের উপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়। অর্থাত্ কেউ নিজের বাড়ির কুকুরের ছানা বিক্রি করতে পারেন। বাণিজ্যিক প্রজনন কেন্দ্রের জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা। আরও পড়ুন: রাস্তার কুকুরদের খাওয়ানোর অধিকার সকলের আছে, দিল্লি হাইকোর্টের এই রায়টি আপনি জানেন?
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন পরিত্যক্ত কুকুর-বিড়াল 'সুন্দর' হয় না। দীর্ঘদিন অবহেলা, পুষ্টির অভাব, রোগ, ট্রেনিংয়ের অভাব এমনকি অত্যাচারের শিকার হওয়া এই প্রাণীগুলিকে অনেক সময় দিতে হয়। তাদের যত্নআত্তি করা মোটেও সহজ বিষয় নয়। আর সেই কারণেই বহু মানুষ সরাসরি দোকান থেকেই কুকুর-বিড়াল ছানা কিনতেন।
দোকানের কুকুর ছানা লোমশ, দেখতে সুন্দর। ক্রেতারা তার পছন্দের ব্রিডের কুকুর বেছে নিতে পারেন। কিন্তু সেই কুকুর ছানার মাকে যদি তিনি একবার দেখতেন!
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় ব্রিডের কুকুর, যেমন জার্মান শেপার্ড, ল্যাব, গোল্ডেন রিট্রিভার, স্প্যানিয়েল বাণিজ্যিকভাবে প্রজনন করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলপূর্বক কোনও মা কুকুরকে বারবার গর্ভধারণে বাধ্য করে। এভাবে দিনের পর দিন শ'য়ে শ'য়ে মা কুকুরকে প্রজননের যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে এই ব্রিডাররা। মা কুকুরগুলিকে সাধারণ ছোট অপরিষ্কার কোনও ঘর, খাঁচায় আটকে রাখা হয়। কাজ চালানোর মতো খাবার দেওয়া হয়। ছানা প্রসবের পর অল্প সময় গেলেই তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ফের প্রজননে বাধ্য করা হয়।
এছাড়াও অপ্রশিক্ষিত ব্রিডারদের কারণে বহু কুকুর ছানার জন্মগত রোগ, বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। তবে পুরোটাই কুকুর ছানা বিক্রি করার লাভজনক ব্যবসা হিসাবে দেখা হয়।
মার্কিন মুলুকে ক্রমেই এই ধরনের পাপি মিল বা কুকুর কলের বিরুদ্ধে সচেতনা গড়ে উঠছে। 'দোকানে নয় বরং দত্তক নিন' ডাক দিয়েছেন পশুপ্রেমীরা। ভারতেও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে বাড়ছে সচেতনতা। নামী জাতের কুকুরের তুলনায় তাই রাস্তার কুকুর ছানা দত্তক নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও পড়ুন: 'দেশি কুকুরের যত্ন নিন, ওরাও ভালবাসতে জানে,' বার্তা কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার
এর আগে ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় ঠিক এই ধরনেরই একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। তাতে এমন পোষ্য কেনা-বেচায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তবে এই আইনে ব্যক্তিগত প্রজননকারীদের কুকুর ছানা বিক্রিতে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
এর পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই ধরনের নীতি গ্রহণ করা হয়। ২০২০ সালে মেরিল্যান্ড দোকানে বিড়াল এবং কুকুরের বিক্রি নিষিদ্ধ করে। দোকান মালিকরা এবং প্রজননকারীরা সেই সময়ে এই আইনের বিরুদ্ধে আদালতে যান।
এর এক বছর পরে ইলিনয়তেও পোষ্য প্রাণীর দোকানে কুকুর এবং বিড়ালছানা বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হয়।
কিন্তু বাড়িতে কুকুরছানা বিক্রিতে বাধা নেই কেন?
এই বিষয়টি ব্যাখা করলেন লিসা হেনলি নামে বাফেলোর এক প্রজননকারী। তিনি ও তাঁর স্বামী বাড়ির কুকুরের প্রজনন করান। সেই ছানা বিক্রি করেন। তিনি বললেন, 'কারও বাড়িতে হওয়া ছানা কিনতে গেলে আপনাকে সেখানে যেতে হবে। আপনি চাইলে আগে থেকে অন্তঃসত্ত্বা কুকুরটির যত্নআত্তি কেমন হচ্ছে সেটা দেখে আসতে পারবেন। প্রসবের পরেও একাধিকবার আপনার দেখা সম্ভব হবে। ফলে গ্রাহকরা বিবেকসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। পাপি মিল-এর কুকুর ছানা যে কোথা থেকে আসছে, তার মায়ের কী অবস্থা, তার কিছুই জানার উপায় থাকে না ক্রেতাদের।'
আপনার কী মনে হয়? এই ধরনের আইন কি যুক্তিসঙ্গত? আপনার পশুপ্রেমী বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার এই প্রতিবেদন।