লোকসভা, রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার পর দণ্ড সংহিতার তিনটি বিল ইতিমধ্যেই আইনে পরিণত হয়েছে। তবে ভারতের বিচার ব্যবস্থায় কবে পরিবর্তন ঘটতে চলেছে? এই সংক্রান্ত তিনটি আইন কবে কার্যকর হবে? জানা গিয়েছে, ব্রিটিশ জমানার বিচার ব্যবস্থার থেকে নয়া সংহিতায় পরিবর্তন যাতে মসৃণ হয়, তার জন্য এখনই কার্যকর হবে না তিনটি আইন। বরং কয়েক মাস পরে এই তিন আইন কার্যকর হবে। এই সময়কালে বিচার ব্যবস্থাকে নয়া তিনটি দণ্ড বিধিতে সড়গড় করা হবে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই তিনটি আইন কবে নাগাদ কার্যকর হতে পারে, সেই তারিখ প্রায় একমাস পরে ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এখন থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস পরে গিয়ে এই তিনটি আইন কার্যকর হতে পারে দেশে। (আরও পড়ুন: কলকাতা থেকে নয়া রুটে চালু বিমান পরিষেবা, 'স্পন্সর' হল সরকার, ভাড়া মাত্র ১৯৯৯)
আরও পড়ুন: বাংলায় ৩টি করে সরকারি ছুটি বাড়ছে ২০২৪ থেকে, কোন কোন দিন কাদের ভাগ্য খুলল?
এদিকে এই তিনটি আইন প্রয়োগ করার পরও সব স্তরে তা পুরোপুরি কার্যকর করতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন, বিচার সংক্রান্ত সফটওয়্যারে বদল, বিচার বিভাগের আধিকারিক ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মতো বিষয় শেষ করতে করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। এই আবহে সব কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে নয়া দণ্ড সংহিতা পুরোপুরি কার্যকর করতে করতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর হতে পারে। এদিকে রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের ওপর এই কাজটা ছেড়ে দেওয়া হবে। এই তিন দণ্ড সংহিতা সংক্রান্ত সম্পূর্ণ নির্দেশিকা এবং ম্যানুয়াল দিয়ে দেওয়া হবে রাজ্যগুলিকে।
আরও পড়ুন: ডিএ বৃদ্ধির দাবিতে এবার সাক্ষাৎ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে, সরকারি কর্মীরা দিলেন উপহারও
প্রসঙ্গত, গত ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য বিলে সই করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরও কড়া বিধি থাকবে দণ্ড সংহিতায়। এছাড়াও গণপিটুনি, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির বিধান থাকবে নয়া আইনে। এই বিল পেশ করে সংসদে দাঁড়িয়ে শাহ স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, 'সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কোনওরকম আপস করা হবে না।' রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে পরিবর্তন প্রসঙ্গে সংসদে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ বলেন, 'ব্রিটিশদের আনা রাষ্ট্রদ্রোহের আইনের অবসান ঘটেছে। এখন দেশের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। সরকারের বিরুদ্ধে যে কেউ যা কিছু বলতে পারে। কিন্তু কেউ দেশের পতাকা, নিরাপত্তা বা সম্পত্তির ক্ষতি করলে তাকে জেলে যেতে হবে। এটা ইংরেজ বা কংগ্রেসের শাসন নয়। বিজেপির শাসনকালে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কোনওরকম আপস করা হবে না।'
আরও পড়ুন: এবার ‘স্থায়ী সরকারি কর্মীর মর্যাদা’ পাবেন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকরাও, মিলবে কত বেতন
অমিত শাহ বলেছিলেন, 'ব্রিটিশদের আনা ১৫০ বছরের পুরনো তিনটি আইনে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন আসছে এই তিনটি বিলের মাধ্যমে। আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে এই পরিবর্তিত আইনগুলি। ভারতীয় দণ্ডবিধির উদ্দেশ্য ছিল শাস্তি দেওয়া, ন্যায়বিচার নয়। সিআরপিসিতে ৪৮৪টি বিভাগ ছিল, এখন এতে ৫৩১টি বিভাগ থাকবে। ১৭৭টি বিভাগে পরিবর্তন করা হয়েছে এবং ৯টি নতুন বিভাগ যুক্ত করা হয়েছে। ৩৯টি নতুন উপ-ধারা যুক্ত করা হয়েছে।' অমিত শাহ আরও বলেছিলেন, 'ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে গরিবদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল অর্থ। বছরের পর বছর ধরে কোনও এক মামলা চলতেই থাকে। পুলিশ বিচার ব্যবস্থাকে দায়ী করে। সরকার পুলিশ ও বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থাকে দায়ী করে। পুলিশ ও বিচার বিভাগ এই বিলম্বের জন্য পালটা সরকারকে দায়ী করে। এখন আমরা নতুন আইনে অনেক কিছুই পরিষ্কার করেছি।'
আরও পড়ুন: শুধু নন-এসি নয়, আসবে এসি অমৃত ভারতও, 'বন্দে সাধারণ' নিয়ে এল বড় আপডেট
নয়া আইন কার্যকর হলে কীভাবে বদলাবে বিচার ব্যবস্থা? এবার থেকে অভিযুক্তরা জামিনের আবেদন করার জন্য সাত দিন সময় পাবেন। বিচারককে সেই সাত দিনে শুনানি করতে হবে এবং সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে মামলার ট্রায়াল শুরু করতে হবে। এখন যদি কেউ অপরাধের ৩০ দিনের মধ্যে তাদের অপরাধ স্বীকার করে তবে শাস্তি কম হবে। এর আগে বিচারের সময় নথি উপস্থাপনের কোনও বিধান ছিল না। আমরা এটা বাধ্যতামূলক করেছি। ৩০ দিনের মধ্যে সমস্ত নথি উপস্থাপন করতে। এতে কোনও বিলম্ব করা যাবে না।