আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া মাথায় নিয়েও দাউদ ইব্রাহিম-সহ ২১ জন কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীকে মহা সমাদরে আশ্রয় দিচ্ছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের এই আচরণে উদ্বিগ্ন বিশ্ব।
কুখ্যাত মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম ও পাকিস্তানের খলিস্তান জিন্দাবাদ ফোর্স-এর সন্ত্রাসবাদী নেতা রঞ্জিত সিং নীতা-সহ মোট ২১ জন আন্তর্জাতিক স্তরের সন্ত্রাসবাদীকে ভিআইপি আতিথ্যে রেখেছে পাক সরকার, জানিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্র। অথচ বিশ্ব দরবারে তারা নাশকতার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দাবি করে আসছে বেশ কিছু কাল যাবৎ। যদিও সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এর আগে সতর্কবার্তা জারি করেছে আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)।
সংবাদসংস্থা এএনআই-এর নাগালে আসা সাম্প্রতিক তালিকা অনুযায়ী, এই মুহূর্তে পাকিস্তানের আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে রয়েছে দাউদ ইব্রাহিম, বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল প্রধান ওয়াধওয়া সিং, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন প্রধান রিয়াজ ভটকল, সন্ত্রাসবাদী মির্জা শাদাব বেইগ ও আফিফ হাসান সিদ্দিবাপার মতো আন্তর্জাতিক স্তরের সন্ত্রাসবাদী।
এদের মধ্যে বেশ কয়েক জনকে একাধিক সন্ত্রাসের ঘটনায় খুঁজছে ভারত সরকার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দান, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার একাধিক প্রমাণ প্রকাশ করেছে দিল্লি। তার জেরে প্যারিসের FATF-এর কোপ থেকে বাঁচতে সন্ত্রাস দমনের ভুয়ো প্রচার চালাচ্ছে পাকিস্তান।
গত অগস্ট মাসে ৮৮ জন সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের তালিকায় থাকা জামাত-উদ-দাওয়া সংগঠনের হাফিজ সইদ আহমেদ, জইশ-ই-মহম্মদ সংগঠনের নেতা মহম্মদ মাসুদ আজহার এবং জাকিউর রহমান লকভি ও দাউদ ইব্রাহিম।
পাক সরকারের দাবি, এই সমস্ত সন্ত্রাসবাদীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও কব্জা করা হয়েছে। এ ছাড়া, তাদের বিদেশ ভ্রমণের উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাক প্রশাসন। কিন্তু আখেরে কতগুলি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ পাকিস্তান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে বাঁচতে মরিয়া চেষ্টা চালালেও এখনও পর্যন্ত সন্দেহের উর্ধ্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। গত ২০১৮ সালের জুন মাসে পাক সরকারকে প্রথম বার সতর্ক করে FATF। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সন্ত্রাস দমনের সব শর্ত পূরণের জন্য ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থা। এর পরে বিশ্বজুড়ে কোভিড সংক্রমণের জেরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
গত কয়েক সপ্তাহে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মরিয়া পাকিস্তান সন্ত্রাস দমনে বেশ কিছু বিল পাশ করে FATF-এর কোপ থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে পাওয়া রিপোর্টে ইতিমধ্যে জানা গিয়েোছে, বাস্তবে সন্ত্রাসবাদীদের খাতির করেই রাখা হয়েছে। আসন্ন FATF বৈঠকের আগে সেই রিপোর্ট যে ইসলামাবাদের বিপক্ষেই যাবে, তা নিয়ে সংশয় নেই আন্তর্জাতিক মহলের।