ভারতীয় সেনা ক্যান্টিনের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করল বিশ্বের দুই অন্যতম বৃহত্তম লিকার প্রস্তুতকারী সংস্থা পার্নো রিকার্ড ও ডিয়াজিও। মনে করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেশীয় পণ্য ব্যবহারের প্রচারে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ আহ্বানের জেরেই ভারতে পণ্য না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই দুই সংস্থা।
করোনা সংক্রমণে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করতে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারই জেরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন মোদী। ভারতকে আত্মনির্ভর করার জন্যও তিনি দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তবে তাঁর এই উদ্যোগকে নিরাপত্তাবাদী এবং বিদেশি বাণিজ্য নীতির পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন সমালোচকরা।
ভারতীয় সেনা ক্যান্টিনে দেশীয় ও বিদেশ থেকে আমদানি করা লিকার ও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতির মতো পণ্য বাজারদরের চেয়ে সস্তায় বিক্রি হয়। কিন্তু শিভাস রিগাল ও গ্লেনলিভেট-এর মতো জনপ্রিয় স্কচ হুইস্কি ব্র্যান্ডের নির্মাতা পার্নো রিকার্ড সাধারণত মাসে ৪,৫০০-৫,০০০ কেসের অর্ডার পেলেও মে মাসে সেনা ক্যান্টিনের কোনও অর্ডার নেয়নি। জেনে রাখা দরকার, প্রতিটি কেসে থাকে ১২ বোতল লিকার।
একই অবস্থা ডিয়াজিও ইন্ডিয়ারও। মে মাস থেকে এই নির্মাতা সংস্থার জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল হুইস্কি ও ট্যালিস্কার সিঙ্গল মল্ট-র অর্ডার নেওয়া বন্ধ হয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মুখ খুলছে না দুই সংস্থাই।
এ দিকে সেনা ক্যান্টিনের কাজে যুক্ত এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘আমরা দেশীয় পণ্য কেনার বিষয়ে গ্রাহকদের উৎসাহিত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর প্রচারের পরে তা আরও গতি পেয়েছে।’
কিন্তু তাতে মন গলছে না সুরাপ্রেমীদের। এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা যেমন বলেছেন, ‘স্কচ পান করা বহু দিন হল অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণে এবার পকেটে টান পড়বে।’ প্রতি মাসে পাঁচটি স্কচের বোতল না হলে তাঁর পরিবারের চলে না, তা-ও জানিয়েছেন বৃদ্ধ।
বিদেশি লিকার আঈমদানির ব্যাপারে এখনও সরকারি কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি না হলেও দুই বিদেশি সংস্থার অনীহার কারণে এবার এমনই কোনও উদ্যোগ সেনার তরফে নেওয়া হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
তা হলে কি এবার ভারতে তৈরি স্কচ সেনা ক্যান্টিনে স্থান পেতে চলেছে? প্রশ্ন শুনে বিদেশি লিকার প্রস্তুতকারী সংস্থার এক কর্তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘নিরাপত্তা দেওয়ার কারণ না থেকেও যদি নিরাপত্তাকামী পদক্ষেপ করা হয়, তা হলে সেনা ক্যান্টিনের পরিবেশ আর বন্ধুত্বপূর্ণ থাকবে না। চেষ্টা করলেও ভারতে স্কচ তৈরি করা অসম্ভব।’
তবু হাল ছাড়তে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ। মে ও জুন মাসে ভারতের লিকার সংস্থাগুলির কাছে তাদের ব্র্যান্ড, কোন দেশে তা তৈরি হয় এবং কী কী বিদেশি উপাদান তাতে ব্যবহার করা হয়, এই সব তথ্য সবিস্তারে চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।