পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প। অনেকেই পিপিএফে অর্থ বিনিয়োগ করতে চান। আপাতত ৭.১ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায় (২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে)। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, পিপিএফ অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও সেই ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও আছে। কোন পাঁচটি কারণে পিপিএফে বিনিয়োগ করলে সমস্যা হতে পারে, তা জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
EPF-র থেকে PPF-এ সুদের হার
এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) থেকে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে (পিপিএফ) সুদের হার কম। সেজন্য বেতনভোগী চাকরিজীবীদের কাছে পিপিএফের জনপ্রিয়তা কম। বেশি রিটার্ন এবং কর সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার জন্য ইপিএফে বাড়তি অর্থও প্রদান করতে পারেন। বর্তমানে ইপিএফে সুদের হার ৮.১৫ শতাংশ। সেখানে পিপিএফে ৭.১ শতাংশ হারে সুদ মেলে। তবে করযোগ্য আয় কমিয়ে দেখাতে অনেকেই পিপিএফে বিনিয়োগ করে থাকেন।
বিষয়টি নিয়ে মাই ফান্ড বাজারের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও বিনীত খাণ্ডারের মতে, পিপিএফে বিনিয়োগের পরিবর্তে ভলান্টিয়ারি প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ভিপিএফ) বড় অঙ্কের টাকা ঢালতে পারেন। তার ফলে তাঁরা তুলনামূলকভাবে বেশি আয়কর সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা পাবেন। মিলবে বেশি সুদ।
PPF-র ম্যাচিওরিটি
পিপিএফ অ্যাকাউন্টের ম্যাচিওরিটি হয় ১৫ বছরে। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে টাকা রেখে দিতে চান, তাঁদের জন্য পিপিএফ অত্যন্ত ভালো বিকল্প। কিন্তু স্বল্পকালীন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেটা সমস্যাজনক হবে। এসএজি ইনফোটেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিত গুপ্তা বলেছেন, ‘যদি কারও অবিলম্বে টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে অন্য কোনও বিকল্পের সন্ধান করতে হবে।’
বিনিয়োগের নির্দিষ্ট সর্বোচ্চসীমা
প্রতি অর্থবর্ষে পিপিএফে সর্বোচ্চ ১.৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। গত কয়েক বছরে সেই সর্বোচ্চসীমা বাড়ানো হয়নি। মাই ফান্ড বাজারের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও বিনীতের মতে, যে চাকরিজীবীরা বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের কাছে ভিপিএফ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। কারণ আয়কর সংক্রান্ত বাড়তি বোঝা ছাড়াই আয়ের থেকে ২.৫ লাখ টাকা কেটে নেওয়া যেতে পারে বলে দাবি করেছেন মাই ফান্ড বাজারের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও।
বিশেষজ্ঞ অমিত গুপ্তা বলেছেন, ‘গত কয়েক বছরে যেহেতু (পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে বার্ষিক) বিনিয়োগের সর্বোচ্চসীমা বাড়ানো হয়নি, তাই যাঁরা বড় অঙ্কের (বার্ষিক দেড় লাখ টাকার বেশি) বিনিয়োগ করতে চান, তাঁরা (পিপিএফে) কম সুযোগ পাবেন।’
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই PPF থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে সমস্যা
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে কঠিন শর্ত আছে। পাঁচ বছর সম্পূর্ণ হওয়ার পর প্রতি অর্থবর্ষে একবার টাকা তোলা যায়। সেক্ষেত্রে শর্তও থাকছে। পাঁচ বছর পরে 'প্রিম্যাচিওর ক্লোজার'-র সুযোগ আছে। সেইসঙ্গে এক শতাংশ সুদ কমে যাবে। অমিত গুপ্তা জানিয়েছেন, যদি কোনও বিনিয়োগকারী আর টাকা লগ্নি করতে না চান, তাহলে বার্ষিক ৫০০ টাকা জমা দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রাখতে পারেন।
আগেভাগে বন্ধ করা যাবে না PPF অ্যাকাউন্ট
পিপিএফের নিয়ম অনুযায়ী, কয়েকটি শর্তেই নির্দিষ্ট সময়ের আগে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা যাবে। প্রথমত, অ্যাকাউন্টধারী, তাঁর সঙ্গী বা তাঁদের উপর নির্ভরশীল সন্তানের অসুস্থতা থাকে, যে অসুস্থতা থেকে প্রাণের ঝুঁকি হতে পারে; দ্বিতীয়ত, অ্যাকাউন্টধারী বা তাঁর উপর নির্ভরশীলরা যদি উচ্চশিক্ষা করে চান; তৃতীয়ত, অ্যাকাউন্টধারীদের বাড়ির ঠিকানা পরিবর্তন হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা যাবে।
যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট তুলে নেওয়া হয়, তাহলে অ্যাকাউন্ট খোলার দিন এক শতাংশ সুদ নেওয়া হবে। মাই ফান্ড বাজারের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও বিনীতের মতে, আগেভাগেই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট বন্ধ না করে প্রতি অর্থবর্ষে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট চালু রাখতে পারেন।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: বিশেষজ্ঞদের মতামত ব্যক্তিগত, তা হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার নিজস্ব মতামত নয়।)