ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার আওতায় কোনও মহিলার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করা যাবে? সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হৃষিকেশ রায় এবং বিচারপতি সঞ্জয় কারোলের বেঞ্চে একটি ধর্ষণের মামলা শুনানি হয়। সেই মামলার শুনানিতে বৃদ্ধা দাবি করেন যে ছেলের বিরুদ্ধে 'ভুয়ো' ধর্ষণের মামলায় তাঁকেও অহেতুক জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই শীর্ষ আদালত সন্দিহান প্রকাশ করে যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার (যে ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা যায়, আর সেই ধারার শুরুতেই পুরুষ উল্লেখ করা আছে) আওতায় কোনও মহিলার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করা যায় কিনা। মৌখিকভাবে শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘আমাদের মতে, শুধুমাত্র পুরুষরাই অভিযুক্ত হতে পারেন।’
যে মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট সেই পর্যবেক্ষণ করেছে, সেই মামলায় ৬২ বছরের বিধবা মহিলা দাবি করেছেন যে ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁর বড় ছেলের সঙ্গে অভিযোগকারীর আলাপ হয়েছিল। তাঁর বড় ছেলে আমেরিকায় থাকতেন। মহিলার সঙ্গে কোনও মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়নি। তারইমধ্যে কোনওরকম অনুষ্ঠান বা রীতি ছাড়াই ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে ওই অভিযোগকারীর সঙ্গে তাঁর বড় ছেলের 'বিয়ে' হয়েছিল। তারপর থেকে বিধবা বৃদ্ধার সঙ্গেই থাকতেন ওই অভিযোগকারী।
তারইমধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিদেশ থেকে তাঁর ছোট ছেলে দেশে ফিরে আসেন দাবি করেছেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর দাবি, তারপরই বড় ছেলের সঙ্গে 'বিয়েতে' ইতি টানতে অভিযোগকারীর পরিবার চাপ দিতে থাকে। শেষপর্যন্ত পঞ্চায়েত সদস্যদের উপস্থিতিতে দু'পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। সেই বাবদ ফেব্রুয়ারিতে অভিযোগকারীকে ১১ লাখ টাকা দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন বৃদ্ধা।
তাঁর দাবি, সমঝোতার পরই তিনি এবং তাঁর ছোট ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করেন অভিযোগকারী। সেই পরিস্থিতিতে আগাম জামিনের আর্জি জানিয়ে নিম্ন আদালতে দ্বারস্থ হন। কিন্তু সেখানে তাঁর আর্জি খারিজ হয়ে যায়। পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্টেও আগাম জামিন মেলেনি। সেই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন মহিলা। তবে সুপ্রিম কোর্টেও আপাতত স্বস্তি মেলেনি। নোটিশ জারি করে তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
যদিও অভিযোগকারী দাবি করেছেন, তিন বছরের সম্পর্কের পরে বৃদ্ধার বড় ছেলের সঙ্গে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন। তিনি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তাহলে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন বড় ছেলে। সেই পরিস্থিতিতে 'বিয়ে' করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন অভিযোগকারী। তিনি দাবি করেছেন, বৃদ্ধার বড় ছেলে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে প্রথমে যেন 'শাশুড়ির' সঙ্গে থাকেন মহিলা। পরে তাঁকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বড় ছেলে।
কিন্তু পরে নিজের ছোট ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য বৃদ্ধা চাপ দিতে থাকেন বলে দাবি করেছেন অভিযোগকারী। তাঁর অভিযোগ, ছোট ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে একটি ঘরে আটকে রেখে দেন বৃদ্ধা। সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করেন ছোট ছেলে। সেই মুহূর্তের ছবিও তুলে রাখেন। শুধু তাই নয়, যখন বাড়িতে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, তখন তাঁর পায়ে বৃদ্ধা গরম চা ছুড়ে দেন বলে অভিযোগ করেছেন মহিলা।