করোনা অতিমারীর মাঝেও ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারত থেকে রপ্তানি করা হয়েছে ২০ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য। এই পরিমাণ রপ্তানির ফলে কৃষিক্ষেত্রে বাণিজ্য বাড়ছে। তবে ব্যবসা বাড়লেও কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। কারণ কৃষকরা খুব কম দামে খাদ্যশস্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪২ বিলিয়ন ডলার পরিমাণের কৃষি পণ্য রপ্তানি করা হয়েছএ ভআরত থেকে। করোনা আবহে খাদ্যশস্য রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। পাশাপাশি এই সময়কালে বিশ্ব বাজারে খাদ্যশস্য বিকিয়েছে চড়া দামে। যাতে লাভবান হয়েছে রপ্তানিকারী সংস্থাগুলি।
এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে সমপরিমাণ রপ্তানি করেছিল ভারত। ২০০৪-০৫ সালে ভারত মাত্র ৮.৭ বিলিয়ন ডলার পরিমাণের খাদ্যশস্য রপ্তানি করছেলি। সেখান থেকে রপ্তানির সেই পরিমাণ দেড় দশক পর ৫ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলারে। মাঝে ২০১৩-১৪ সালে ভারত ৪২.৬ বিলিয়ন ডলার পরিমাণের খাদ্যশস্য রপ্তানি করেছিল। তবে ২০১৩-১৪ সালের পর কমতে শুরু করেছিল খাদ্যশস্যের রপ্তানির পরিমাণ। সেই নিম্নমুখী গ্রাফ করোনা আবহে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
এছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই রপ্তানির উপর থেকে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। যেমন চিনির উপর প্রতি টন ২০০০ টাকা শুল্ক কমিয়েছে কেন্দ্র। এর ফলে প্রতি টন চিনির রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ৬০০০ থেকে কমে ৪০০০ হয়। উল্লেখ্য, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি উৎপাদনকারী দেশ। এদিকে সারা বিশ্বে চিনি, গম, চালের মতো খাদ্যশস্যের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।
খাদ্যশস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে ভারতের। এই সব প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছনে ফেলতে ভারতীয় রপ্তানিকারী সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে শস্য বিক্রি করছে। অস্ট্রেলিয়া এবং ইউক্রেনের মতো দেশের থেকে ভারত ৬ শতাংশ কম দামে গম রপ্তানি করছে। প্রতি টন গম ভারত থেকে রপ্তানি করা হয়েছে ২৮০ ডলার দামে। এদিকে কৃষকরা সেই গম প্রতি বিক্রি ১৯৭৫ টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে।
তবে অনেক কৃষকরাই ন্যূনতম সহায়ক মূল্যেও শস্য বিক্রি করতে পারেন না। উত্তরপ্রদেশে অনেক কৃষকই ১৪০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে চাল বিক্রি করেছে যার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ১৮৬৮ টাকা প্রতি কুইন্টাল। যেসব রাজ্যে সরকার কৃষকদের থেকে সঠিক ভাবে শস্য কেনে না, সেখান থেকে খুব সহজেই রপ্তানিকারী সংস্থাগুলি এমএসপি-র থেকেও কম দামে কৃষকদের থেকে শস্য কিনে নিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে কৃষকদের থেকে সরকার খুব বেশি পরিমাণে শস্য কেনে না। তাই এখানকার কৃষকদের খোলা বাজারে কম দামেই শস্য বিক্রি করতে হয়। এবং সেখান থেকে কম দামে শস্য কিনে লাভ করছে রপ্তানিকারী সংস্থাগুলি।