ঐতিহাসিক রায় দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রেমে পড়ে একে অপরের সাহচর্যে জীবন কাটাতে চাওয়া কোনও ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া অপরাধ বলে একটি মামলার শুনানিতে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, এটা জঘন্যতম অপরাধগুলির মধ্যে অন্যতম।
সুপ্রিম কোর্ট ১১ জন ব্যক্তির জামিন মঞ্জুরের একটি আবেদনের শুনানি শুরু করে। যারা ‘খাপ’ পঞ্চায়েতের সদস্য। প্রেমে পড়া এক জোড়া ছেলেমেয়ে–সহ তিন জনকে ফাঁসির আদেশ দেয় ওই খাপ পঞ্চায়েত। ১৯৯১ সালের ২৭ মার্চ উত্তরপ্রদেশের মথুরা জেলায় ঘটনাটি ঘটেছিল। ২০১৬ সালের মে মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্ট এই জঘন্য অপরাধের জন্য ৩৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল।
যোগী রাজ্যের ঘটনায় প্রকাশ, ছেলে–মেয়েগুলি ছিল জাতব সম্প্রদায়ভুক্ত। যেখানে খাপ পঞ্চায়েত গঠিত হয়েছিল মূলত জাট সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে। মেয়েটি তার পছন্দ হওয়া একটি ছেলে এবং তাদের সাহায্যকারী অন্য এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। খাপ পঞ্চায়েতের কাছে তলব করা হলে, যুবতী বলেছিল সে ছেলেটির সঙ্গেই থাকতে চায়। আর তাতেই পঞ্চায়েত ওই তিন জনের বাবা–মাকে নিজের সন্তানকে ঝুলিয়ে রাখতে বাধ্য করেছিল। দু’টি ছেলেকেই মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছিল এবং ফাঁসির আগে তাদের গোপনাঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ভারতের প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলে, ‘এই অপরাধগুলি এতটাই গুরুতর যে সামাজিক গঠনকে আঘাত করতে পারে। প্রেমে পড়ার জন্য আপনি কাউকে শাস্তি দিতে পারবেন না। এটি অপরাধের অন্যতম ভয়াবহ রূপ।’
প্রধান বিচারপতি–সহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএস বোপান্না, বিচারপতি ভি রামসুব্রহ্মণ্যর গঠিত বেঞ্চ বলে, ‘আমরা তাদের (আবেদনকারীদের) মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে চাই। তাদের মুক্তি দেওয়া হলে পুরনো ঘটনাটি ফের নতুন করে সৃষ্টি করতে পারে। যা অন্যের জন্য বা তাদের নিজেদেরও সমস্যার সৃষ্টি করবে কি না, সেটাও দেখতে হবে। তাদের মুক্তি দিতে গেলে অন্য জেলায় পাঠাতে হবে।’ সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিককে আগ্রা এবং মথুরার জেল পরিদর্শন করে অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলার পর আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা করার নির্দেশ দিয়েছে।