কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধের আইন করতে চান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট৷ পশু অধিকার কর্মীরা খুব খুশি৷ তবে এমন আইন প্রণয়নের বিরোধিতাও করছেন একটা পক্ষ৷
গত সেপ্টেম্বরে কুকুরের মাংস খাওয়া বন্ধের আইন প্রণয়নের আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন৷ পশুপ্রেমী প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন পশু অধিকার কর্মীরা৷ সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকেই সমর্থনের আভাস পেয়েছেন মুন৷ সম্ভাব্য আইনটি নিয়ে তাই সংসদে দীর্ঘ আলোচনা হবে বৃহস্পতিবার৷
পশুপ্রেমীরা আশাবাদী
প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন নতুন আইনের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেছিলেন, কুকুরের মাংস খাওয়া আন্তর্জাতিক পরিসরে বেশ বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেকেই আগের মতো আর কুকুরের মাংস খেতে চান না, তাই এখনই তা বন্ধ করা উচিত৷ পশুপ্রেমী এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ প্রজন্মের একাংশ মনে করে, সরকার চাইলে এখন দেশে কুকুরের মাংস বিক্রি এবং খাওয়া বন্ধ করা সম্ভব৷
কুকুরের মাংসের জনপ্রিয়তা কমছে
১৯৮৮ সালের সিওল অলিম্পিকের সময় সিওলের সব রেস্তোরাঁয় কুকুরের মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছিল সরকার৷ দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির বিষয়ে বিদেশি ক্রীড়াবিদ ও অন্য অতিথিদের মনে একটা ভুল ধারণা জন্ম নিতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ তখন থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংসের জনপ্রিয়তা কমছে৷ কুকুরের মাংস বিক্রি হয় এমন রেস্তোরাঁর সংখ্যাও কমছে দ্রুত৷ ২০১৯ সালে রাজধানী সিওলে এমন রেস্তোরাঁ ছিল ১০০-রও কম৷ এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার কোনও কোনও শহরে বছরে শতকরা ৩০ ভাগ হারে কুকুরের মাংস খাওয়া কমছে৷
এছাড়া ২০২০ সালে হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল (এইচএসআই)-র এক সমীক্ষায় বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার খুব কম মানুষই এখন কুকুরের মাংস খায়৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার ৮৪ ভাগ মানুষই এখন কুকুরের মাংস খান না৷ সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬০ ভাগ মানুষ জানান, তাঁরা কুকুরের মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করার পক্ষে৷
পালটা যুক্তি
তবে এখনও অনেক বয়স্ক মানুষ ঐতিহ্য হিসেবে কুকুরের মাংস নিয়মিত খাওয়ার পক্ষে৷ শিক্ষিত তরুণদেরও ছোটো একটা কুকুরের মাংস খাওয়ার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান৷ পালটা যুক্তিও দেখান তাঁরা৷ সিওলের সাংমিউং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর গ্লোবাল ক্রিয়েশন অ্যান্ড কোলাবোরেশনেপ অধ্যাপক ইয়ং-চায়ে সং মনে করেন, আইন করে কুকুরের মাংস খাওয়া বন্ধ করার কোনও দরকার নেই। কারণ, এমনিতেই মানুষের মধ্যে এই ধরনের মাংসের প্রতি আকর্ষণ অনেক কমে যাচ্ছে৷ এ কারণে কুকুরের মাংস পরিবেশন করা হয় এমন রেস্তোরাঁও আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যা অবস্থা তাতে ধীরে ধীরে একদিন যে কুকুরের মাংস খাওয়া এমনিতেই প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷’
তবে তিনি মনে করেন, কোনও প্রাণী পুষলেই যে সেই প্রাণীর মাংস খাওয়া যাবে না এ ধারণাটা ভুল৷ তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এখনও কুকুরের মাংস খাওয়া ঐতিহ্যের অংশ৷ আমার কোনও বন্ধু বা পরিবারের কেউ রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেতে বললে আমি নিশ্চয়ই তাদের সঙ্গে কুকুরের মাংস খাব৷ তাছাড়া কুকুর পোষা হয় বলে খাওয়া যাবে না এ কথাও ঠিক নয়৷ তাইওয়ানে দেখেছি, কতলোক তার পোষা শূকরটাকে পোশাক পরিয়ে, সাজিয়ে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছে৷ কিন্তু তাইওয়ানের মানুষ তো শূকরের মাংস খান৷'
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)