সেনায় স্থায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাতিল হয়ে যাওয়া ‘আনফিট’ মহিলা আধিকারিকদের নামের তালিকা তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। পুরুষতান্ত্রিক আমলাতন্ত্রে মহিলাদের সেনাবাহিনীর বাইরে রাখার ইচ্ছার জেরেই বৈষম্য, ধারণা আদালতের।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা ও বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যের বেঞ্চে ১২ জন মহিলা এসএসসি আধিকারিকের দায়ের করা মামলার শুনানি ছিল। অভিযোগ, ফিটনেস পরীক্ষা পদ্ধতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কড়া পরীক্ষানীতি প্রয়োগের দরুণ স্থায়ী নিয়োগ (পার্মানেন্ট কমিশন) থেকে ওই আধিকারিকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
আবেদন শুনে বেঞ্চ মন্তব্য করে, ‘নেতৃত্ব ও কূটনীতির ভিন্ন স্তরে এক অন্য রকম মানসিকতা কাজ করছে। কূটনীতিক মহলে এখনও মনে রাখা হয় যে, এঁরা মহিলা। বিচারের মাধ্যমে এই বৈষম্য আমাদের দূর করতে হবে।’
কেন্দ্রীয় সরকার ও সেনাবাহিনীর তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল সঞ্জয় জৈন এই অভিমত সমর্থন না করে বলেন, ‘মহিলা এসএসসি আধিকারিকদের পার্মানেন্ট কমিশন দেওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট যখন চিন্তাভাবনা করছিল, সেই সময়েও এই বিতর্ক উঠেছিল। অভিযোগকারী বেশ কয়েক জন আধিকারিক ফিটনেশ পরীক্ষার সব শর্ত পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদের স্বার্থের কথা ভেবে আদালত জানিয়েছিল, ন্যূনতম ২০ বছর চাকরি করলে তাঁরা পেনশন পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন। সেই নির্দেশ মেনে এ পর্যন্ত ৬৫০ জন মহিলা এসএসসি আধিকারিককে স্থায়ী নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে।’
জৈনের কাছে আদালতজানতে চায়.৬৫০ জনের মধ্যে কত জন মহিলা এসএসসি আধিকারিক ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। নিজেদের আবেদনে তাঁরা যুক্তি দিয়েছেন যে, দলের অনেকেরই বয়স ৩৫-৫০ বছর এবং বয়সজনিত ও সন্তান জন্ম দেওয়ার ফলে তাঁদের শারিরিক বিকৃতি ঘটেছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের ১অগস্টের নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, পার্মানেন্ট কমিশনের প্রস্তাব গ্রহণের সময় আধিকারিকদের ফিট থাকা আবশ্যিক।
আদালত জৈনের কাছে জানতে চেয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই মহিলা আধিকারিকদের কোনও ছাড় দেওয়া সম্ভব কি না। কিন্তু সরকারি আইনজীবী বলেন, এ বিষয়ে কোনও ব্যতিক্রম ঘটলে গোটা ব্যবস্থাই টালমাটাল হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, মহিলা আধিকারিকদের প্রতি দেশ কৃতজ্ঞ, কিন্তু সেনায় স্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে শারীরিক ফিটনেস থাকতেই হবে।
এতে আদালত জানায়, এক দশক আগেও ওঁদের ফিট মনে করা হয়েছিল, যখন ২০১০ সালের মার্চ মাসে দিল্লি হাই কোর্ট এসএসসি মহিলা আধিকারিকদের স্থায়ী নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় আপনারা নির্দেশ পালন করেননি। সেই সময় তাঁরা ফিটনেস পরীক্ষায় পাশ করতেই পারতেন। ওঁরা আর কিছুই চান না, শুধু বর্তমান অবস্থার কথা বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
অন্য দিকে, আবেদনকারীরা শারীরিক পরীক্ষা নিয়ে আপত্তি তোলার পাশাপাশি টাইম স্কেল প্রোমোশনের ভিত্তিতে কর্নেল পদে উন্নয়নের জন্যও প্রার্থনা জানিয়েছেন। পরবর্তী শুনানির দিন, ৩ নভেম্বর এই বিষয়ে সরকারি আইনজীবীকে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।