কর্ণাটকে নার্সিং কলেজের বাথরুমে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে এক ছাত্রীর ভিডিয়ো তোলার অভিযোগ নিয়ে শুরু হল রাজনৈতিক তরজা। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও পালটা অভিযোগ তুলেছে বিজেপি এবং কংগ্রেস। তারইমধ্যে এক সমাজকর্মী দাবি করেছেন, ওই ঘটনাটি নিয়ে মুখ খোলায় তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে হেনস্থা করছে কংগ্রেস-শাসিত কর্ণাটকের পুলিশ। যে ঘটনাকে তিনি ১৯৯২ সালে আজমেঢ়ের পৈশাচিক গণধর্ষণকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন (একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে রাজস্থানের আজমেঢ়ে একটি গ্যাং সক্রিয় ছিল। কিশোরী, তরুণীদের ফুঁসলিয়ে গণধর্ষণ ছবি প্রিন্ট করে ব্ল্যাকমেল করত। যদিও পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই ঘটনায় যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু পোস্ট করতে বারণ করা হয়েছে, যা সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন: Hijab Row Verdict: ‘হিজাব খুলে স্কুলে ফিরুক ছাত্রীরা’, রায়দানে খুশি BJP, ‘অযৌক্তিক’, পাল্টা ওয়াইসির
ঘটনাটি ঠিক কী হয়েছিল? একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই উদুপির (যেখানে হিজাব বিতর্ক হয়েছিল) একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজে সেই ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত তিন ছাত্রীকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে সোমবার (ইংরেজি মতে) টুইটারে সমাজকর্মী রশ্মি সামন্ত টুইটারে বলেন, ‘আমি উদুপির বাসিন্দা। কেউ আলিমাতুল শৈফা, শাহবানাজ এবং আলিয়ার বিষয়ে কোনও কথা বলছেন না। যাঁরা কয়েকশো হিন্দু মেয়ের দৃশ্য রেকর্ড করতে নিজেদের কলেজের মহিলা টয়েলেটে ক্যামেরা রেখে দিয়েছিল। যে ভিডিয়ো এবং ছবি নিজেদের হোয়্যাটসঅ্যাপে গ্রুপ ছড়িয়ে দিয়েছিল অপরাধীরা।’
রশ্মি আরও দাবি করেন, ওই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলায় তাঁর হেনস্থা করছে পুলিশ। রাতে তাঁর বাড়িতে আসেন পুলিশ আধিকারিকরা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁর বাবা-মা'কেও। আদতে তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেছেন রশ্মি। সংবাদমাধ্যমে নিউজ১৮-তে তিনি দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের ফোনগুলি এখনও ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়নি। পুলিশ দাবি করছে যে ভিডিয়োগুলি মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে প্রযুক্তি আছে, তা দিয়ে ডিলিট হয়ে যাওয়া ভিডিয়ো এবং ছবি অনায়াসে ফিরিয়ে আনা হয়।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে উদুপির পুলিশ সুপার অক্ষয় মাচিন্দ্রা দাবি করেন, অভিযুক্ত তরুণীদের থেকে ছবি এবং ভিডিয়ো পাওয়া যায়নি। ওই তরুণীরা ব্ল্যাকমেল করছিল এবং ভিডিয়ো ফাঁস করে দিচ্ছিল বলে যে অভিযোগ উঠছিল, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। ইতিমধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ তদন্ত চালিয়েছে। তদন্তের সময় একটি হাতে লেখা চিরকূট উদ্ধার করা হয়েছে। যাতে অভিযুক্তরা নাকি লিখেছে, 'মজার' জন্য সেই কাজ করেছে। সেইসঙ্গে পুলিশ সুপারের আর্জি, কোনওরকম উস্কানিমূলক বিষয় যেন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট না করা হয়। কোনও প্রমাণ থাকলে পুলিশকে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
উদুপি পুলিশের তরফে আরও জানানো হয়েছে, নার্সিং কলেজে যে ঘটনা ঘটেছে, তা নেহাতই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ওই ঘটনার সঙ্গে কোনও ধর্মীয় যোগ নেই। পুরো বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে তদন্ত চালানো হয়েছে। ভিডিয়ো কোথাও শেয়ার করা হয়েছে বলে কোনও প্রমাণ মেলেনি। সেইসঙ্গে যে ছাত্রীর ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছিল, তিনি কোনও অভিযোগ দায়ের না করায় পুলিশের হাত-পা বাঁধা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।